ঠোঁট ফাটার কারন ও সমাধান
ঠোঁট ফাটার কারন ও সমাধান
আসি আসি করে শীতকাল চলেই এলো। শীতকাল মানেই আমাদের কাছে লেপের তলায় আরামের ঘুম আর পিঠা-পুলির উৎসব। কিন্ত আরামের আমেজ নিয়ে আসা এই শীত তার নিজের সাথে করে নিয়ে আসে কিছু নির্দিষ্ট অসুখ বিসুখও। এর মধ্যে ঠান্ডা, জ্বর , পা ফাটা ও ঠোঁট ফাটা অন্যতম। আমাদের আর্টিকেলের শিরোনাম দেখেই ইতিমধ্যেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে, আমরা আজকে কি টপিক নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি? হ্যাঁ, আমরা আজকে ঠোঁট ফাটার কারন এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো।
শীতকালে ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা। কিন্তু গরমকালেও অনেকেই ঠোঁট ফাটার সমস্যায় ভুগে থাকেন। ঠোঁট ফাটা সমস্যার অনেক কারণ রয়েছে। শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়া, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, ঠোঁট কামড়ানো, অ্যালার্জি, ত্বকের বিভিন্ন রোগ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অভাব ঠোঁট ফাটার কারনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এবার চলুন কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আমাদের আজকের টপিকের মূলস্রোতে।
আলোচ্য বিষয়
- ঠোঁট ফাটার কারন
- ঠোঁট ফাটার সমাধান
- শীতে ঠোঁটের নিয়মিত যত্ন
- ঠোঁট ফাটা নিয়ে কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
- আমাদের শেষ কথা
ঠোঁট ফাটার কারন
ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও কখনো কখনো এটি খুবই বিব্রতকর ও অস্বস্তির কারন হতে পারে। ঠোঁট ফাটা সমস্যা সাধারনত শীতকালে বেশি দেখা যায়। কিন্তু গরমকালেও অনেকেই ঠোঁট ফাটার সমস্যায় ভুগে থাকেন। ঠোঁট ফাটার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। নিচে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
- শীতের শুষ্ক আবহাওয়া: শীতে বাতাসের আর্দ্রতা খুবই কমে যায়। ফলে ত্বকসহ ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায় এবং ফেটে যায়।
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বা ‘ আল্ট্রা ভায়োলেট রে’ ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। ফলে ঠোঁট ফেটে যায়।
- ঠোঁট কামড়ানো: অনেকেরই ঠোঁট কামড়ানোর অভ্যাস রয়েছে। এতে ঠোঁটের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফেটে যায়।
- অ্যালার্জি: কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঠোঁট ফাটার কারণ হতে পারে অ্যালার্জি। যেমন, কিছু কিছু খাবার, ওষুধ, বা প্রসাধনী অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে ঠোঁট ফাটতে পারে।
- চর্মরোগ: ত্বকের কিছু রোগের কারনেও ঠোঁট ফাটার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু চর্মরোগ যেমন, একজিমা বা সোরিয়াসিস ইত্যাদি ঠোঁট ফাটার কারণ হতে পারে।
- ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অভাব: শরীরে কিছু ভিটামিন যেমন; ভিটামিন বি২, বি৩, বা বি১২ এর অভাব হলে ঠোঁট ফাটার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আমাদের আরো কিছু আর্টিকেলঃ
- পা ফাঁটার কারন ও প্রতিকার
- ক্যান্সারের ঝুঁকি ও প্রতিরোধ
- মাদকের ভয়াবহতা ও প্রতিকার
- ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধের ১০টি কার্যকর উপায়
ঠোঁট ফাটার সমাধান
এতক্ষনতো ঠোঁট ফাটার কারন সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা জানবো ঠোঁট ফাটার সমাধান সম্পর্কে।
ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:
ঠোঁটকে আর্দ্র রাখুন: ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল ঠোঁটকে সবসময় আর্দ্র রাখা। এর জন্য নিয়মিত ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার বা লিপ বাম লাগান।
শীতকালে ঠান্ডা বাতাস থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করুন: শীতকালে বাইরে বেরোনোর সময় ঠোঁটে লিপবাম বা ময়েশ্চারাইজার লাগান এবং টুপি বা মাফলার দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করুন: সূর্যের আলো থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করার জন্য বাইরে বেরোনোর সময় ঠোঁটে সানস্ক্রিন লাগান।
ঠোঁট কামড়ানো থেকে বিরত থাকুন: ঠোঁট কামড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
অ্যালার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন: যদি আপনার অ্যালার্জি ঠোঁট ফাটার কারণ হয়ে থাকে, তাহলে অ্যালার্জির কারণ বের করে এড়িয়ে চলুন।
চর্মরোগের চিকিৎসা করুন: যদি আপনার কোন চর্মরোগ ঠোঁট ফাটার কারণ হয়ে থাকে, তাহলে ত্বকের রোগের যথাযথ চিকিৎসা করুন।
ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অভাব পূরণ করুন: শরীরে ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অভাব পূরণ করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
শীতে ঠোঁটের নিয়মিত যত্ন
শীতকালে ঠোঁট ফাটার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। তাই শীতে ঠোঁট ফাটা কমাতে ঠোঁটের নিয়মিত যত্ন নেওয়া জরুরি। শীতে ঠোঁটকে ভালো রাখতে নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- শীতে বাইরে বেরোনোর আগে ঠোঁটে লিপ বাম বা ময়েশ্চারাইজার লাগান।
- বাইরে থেকে ফিরে আসার পর ঠোঁট পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
- রাতে ঘুমানোর আগে ঠোঁটে লিপ বাম বা ময়েশ্চারাইজার লাগান।
- ঠোঁট কামড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
- ঠোঁটে সরাসরি গরম পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- ভালো মানের লিপ অয়েল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- ভালো মানের লিপ স্ক্রাবার ব্যবহার করুন।
ঠোঁট ফাটা নিয়ে কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: ঠোঁট ফেটে গেলে কী করতে হবে?
উত্তর: ঠোঁট ফেটে গেলে প্রথমেই ঠোঁট একটি লিপ স্ক্রাবার দিয়ে ঘষে মরা চামড়া পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপরে ভালো মানের লিপ বাম বা ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। এছাড়াও, ঠোঁট ফাটা থেকে রক্ষা করার জন্য শীতকালে বাইরে বেরোনোর সময় ঠোঁটে লিপ বাম বা ময়েশ্চারাইজার লাগান এবং টুপি বা মাফলার দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করার জন্য বাইরে বের হওয়ার সময় ঠোঁটে সানস্ক্রিন লাগান।
প্রশ্ন ২: ঠোঁট ফাটা থেকে বাঁচতে কী কী খাবার খাওয়া উচিত?
উত্তর: ঠোঁট ফাটা দূর করতে সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ভিটামিন বি২, বি৩, এবং বি১২ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়াও, ঠোঁট ফাটা থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
প্রশ্ন ৩: ঠোঁট ফাটা দূর করার জন্য কোনো মেডিসিন আছে কি?
উত্তর: ঠোঁট ফাটার জন্য সাধারণত কোনো ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। তবে, যদি ঠোঁট ফাটা খুব বেশি হয় বা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্ট বা স্কিন স্পেশালিষ্ট ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন ৪: ঠোঁট ফাটা দূর করার জন্য কোনও ঘরোয়া প্রতিকার আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, ঠোঁট ফাটা দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপাদান কাজ করতে পারে। এরকমই কিছু উপাদান হলো:
- মধু: মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই ফেটে যাওয়া ঠোঁট সারিয়ে তুলতে মধু খুবই উপকারী। প্রতিদিন একবার ঠোঁটে মধু ব্যবহার করতে পারেন।
- অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই ঠোঁট ফাটায় অলিভ অয়েল লাগালে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
- অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদানে পরিপূর্ণ । তাই ক্ষতিগ্রস্ত ঠোঁটে অ্যালোভেরা জেল লাগালে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন ৫: ঠোঁট ফাটা ভালো হতে কতদিন লাগে?
উত্তর: ঠোঁট ফাটায় ভালো হতে সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। তবে, ঠোঁট ফাটার কারণ এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে এটি আরও বেশি সময়ও লাগতে পারে।
প্রশ্ন ৭: ঠোঁট ফাটায় ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
উত্তর: ঠোঁট ফাটায় ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এটি সাধারণত ঠোঁট ফাটার তীব্রতার উপর নির্ভর করে। যদি ঠোঁট ফাটা খুব বেশি হয় বা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তাহলে ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আমাদের শেষ কথা
ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও কখনো কখনো এটি বেশ কষ্টকর হতে পারে। তাই ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জন্য উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি মনে রাখা এবং অনুসরণ করা খুবই জরুরি।
আমাদের আজকের আর্টিকেলে, আমরা চেষ্টা করেছি ঠোঁট ফাটার কারন ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে। আশা করি আর্টিকেলটি পাঠকের উপকারে আসবে। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।