পা ফাঁটা সমস্যার কারণ এবং এর প্রতিকার।
পা ফাঁটা আমাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনকে ব্যহত করে। পা ফাঁটার ফলে অনেকসময় আমাদের স্বাভাবিক হাঁটাচলা, দৌড়ানোসহ বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপ কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া পা ফাঁটার ফলে স্কিনে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো এটি পাবলিক প্লেসে আমাদের লজ্জা ও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পা ফাঁটা খুবই সাধারন একটি সমস্যা হলেও কারো কারো জন্যে এটি খুবই অস্বস্তিকর হতে পারে। আর এখন যেহেতু শীতকাল চলছে তাই এসময় এই সমস্যাটি তাদের জন্য আরো বেশি ভোগান্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আমরা পা ফেঁটে যাওয়ার কারন, এই সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতি এবং এই বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নোত্তর দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করেছি যা আমাদের এই শীতে পা ফাঁটার সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিবে বলে আশা করছি। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই আমাদের আজকের আর্টিকেলটি।
আলোচ্য বিষয়
- পা ফাঁটার কারন
- পা ফাঁটা রোধে করনীয়
- পা ফাঁটা সমস্যা বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নোত্তর
- আমাদের শেষ কথা
পা ফাঁটার কারন
পা ফাঁটার সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে হলে আমাদের প্রথমেই জেনে নেওয়া প্রয়োজন যে ,আসলে কি কি কারনে আমাদের পা ফাঁটে। পা ফেঁটে যাওয়ার কারনগু্লো জানলে আমরা খুব সহজেই এই সমস্যাটিকে প্রতিরোধ করতে পারবো। চলুন জেনে নেই কি কি কারনে আমাদের পা ফাঁটে।
পা ফাঁটার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
শুষ্কতা: শুষ্কতা পা ফাঁটার পিছনে সবচেয়ে বড় কারন। শুষ্কতা ত্বকের কোলাজেন এবং ইলাস্টিনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে যার ফলে পা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ শক্ত হয়ে যায়। তাই পায়ের ত্বক শুষ্ক হলে তা সহজেই ফেটে যেতে পারে। শীতকালে বা শুষ্ক পরিবেশে পায়ের ত্বক অনেকসময় খুবই শুষ্ক হয়ে যায়।
ভিটামিনের অভাব: শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিলেও পা ফাঁটার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন এ, ডি, ই, এবং সি এর অভাব পা ফাটার কারণ হতে পারে।
ত্বকের রোগ: কিছু চর্মরোগ যেমন; এক্সিমা, সোরিয়াসিস, এবং কিছু অন্যান্য রোগ যেমন; ডায়াবেটিসের মতো রোগ শরীরের ত্বকসহ পা ফাঁটার কারণ হতে পারে।
আমাদের আরো কিছু আর্টিকেল;
- ক্যান্সারের ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও প্রতিকার
- সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ১০টি গুরুত্বপূর্ন টিপস
- মাদকের ভয়াবহতা এবং এর প্রতিকার
- ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধের ১০টি উপায়
অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন ও কিন্ত পা ফাঁটার পিছনে দায়ী হতে পারে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে পায়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যার ফলে পা ফাটার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অমানানসই জুতা: সবসময় পায়ের নির্দিষ্ট মাপের চাইতে ছোট জুতা পরিধান করলেও পা ফাটার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। আঁটসাঁট জুতা পায়ের ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে পা ফাঁটার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা: যারা দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করেন , তাদের ক্ষেত্রেও পা ফাঁটার সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার ফলে পায়ের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যার ফলে পা ফেটে যেতে পারে।
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনেও পা ফাঁটতে পারে। বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক ঔষধ , ডায়াবেটিক ইনসুলিন ইত্যাদি মেডিসিনগুলো পা ফাটাঁর কারন হতে পারে।
পা ফাঁটা রোধে করনীয়
এতক্ষন তো আমরা পা ফেটে যাওয়ার কারন সম্পর্কে জানলাম। এবার আমরা জানবো কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমরা পা ফাটাঁ থেকে মুক্তি পেতে পারি। পা ফাঁটা দূর করার জন্য বেশ কিছু ঘরোয়া সমাধান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগান; পায়ের ময়েশ্চার বা স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে যাওয়ার ফলে পা ফাঁটার সমস্যা দেখা দেয়। তাই পায়ের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ঠিক রাখতে পায়ে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
পা যথাসম্ভব শুকনো রাখুন; পা খুব বেশিসময় ধরে ভেজা থাকলেও অনেকসময় পা ফেঁটে যায়। তাই পায়ের গোড়ালি যথাসম্ভব শুকনো রাখুন। গোসল শেষ করে বা পা কোনো কারনে ভিজিয়ে থাকলে সাথে সাথে মুছে ফেলুন।
নিয়মিত পায়ের গোড়ালি ঘষুন; নিয়মিত পায়ের তলা ঘষে পরিষ্কার রাখুন। পায়ের তলায় একধরনের ময়লার আস্তরন জমে থাকে যা দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করলে পা ফেটেঁ যায়।
পুষ্টিকর খাবার খান; বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতিও পা ফাঁটার অন্যতম কারন। তাই নিয়মিত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান। সুষম খাবার গ্রহনের ফলে পা ফাঁটার সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পারেন।
পা ফাঁটা সমস্যা বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। পা ফাঁটা কি কোন রোগের লক্ষণ?
উত্তরঃ না ,পা ফাঁটা সরাসরি কোন রোগের লক্ষণ নয়। তবে এটি কিছু স্কিন ডিজিজ এর লক্ষণ হতে পারে। যেমন, এক্সিমা, সোরিয়াসিস, এবং ডায়াবেটিস।
প্রশ্ন ২। পা ফাঁটা কি সারানো যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ, পা ফাঁটা পুরোপুরি সারানো যায়। তবে এর জন্য সময় এবং ধৈর্য্যের প্রয়োজন। পাশাপাশি সঠিক চিকিৎসার ও প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৩। পা ফাঁটা প্রতিরোধের উপায় কি?
উত্তরঃ পা ফাঁটা প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
- নিয়মিত পা পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন।
- পায়ের গোড়ালিতে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
- নিয়মিত পায়ের গোড়ালি ঘষে পরিষ্কার করুন।
- সঠিক মাপের জুতা পরিধান করুন।
- ভিটামিনযুক্ত খাবার খান।
প্রশ্ন ৪। পা অনেক বেশি শক্ত হয়ে ফেঁটে গেলে কি করতে পারি?
উত্তরঃ পা খুব বেশি শক্ত হয়ে ফেটে গেলে নিচের পদ্ধতিটি অনুসরন করতে পারেন।
- আধা বালতি গরম পানি নিন।
- এতে খানিকটা শ্যাম্পু ,অর্ধেক লেবু্র রস ও এক চামচ লবন মিশিয়ে নিন।
- এবার এতে পা এক ঘন্টার মতো ডুবিয়ে রাখুন।
- এক ঘন্টা পর পা কিছুটা নরম হয়ে গেলে একটি পা ঘষার ব্রাশ দিয়ে পা ভালো করে ঘষে নিন।
- এবারে পা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে একটি তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে নিন।
- এবার যেকোন ময়েশ্চারাইজার, গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন।
এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন অনুসরন করলে আপনি খুব ভালো একটি ফলাফল দেখতে পাবেন। এটি শুধুমাত্র যাদের পা ফাঁটে তারাই নয় বরং পা সুন্দর রাখার জন্য যে কেউ করতে পারেন।
প্রশ্ন ৫। পা ফাঁটা রোধ করার জন্য কি ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারি?
উত্তরঃ পা ফাটাঁ রোধ করার জন্য নিয়মিত যেকোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এগুলো হতে পারে গ্লিসারিন, যেকোনো লোশন ও পেট্রোলিয়াম জেলি। অলিভ অয়েল ও পা ফাটাঁ প্রতিরোধে খুব ভালো কাজ করে থাকে।
প্রশ্ন ৬। কি কি ভিটামিনের অভাবে পা ফাঁটতে পারে?
উত্তরঃ ভিটামিন এ, ডি, ই, এবং সি এর অভাবে পা ফাঁটার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন রঙিন শাকসবজি ও ফলমূলে ভিটামিন এ, মাছের কলিজা ও লিভারে ভিটামিন ডি ও বিভিন্ন টকফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এসকল খাবার রাখার চেষ্টা করুন।
আমাদের শেষ কথা
পা ফাঁটা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করতে পারে। কখনো কখনো পা ফাঁটা এতটাই বেশি হয় যে এর ফলে পা থেকে রক্তপাতও হতে পারে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা পা ফাটাঁর কারন, পা ফাঁটা প্রতিরোধ এবং এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের পদ্ধতি আলোচনা করেছি। এই পদ্ধতিগুলো অনুসরন করেও যদি আপনার পা ফাঁটা দূর করতে না পারেন তবে একজন ডার্মাটোলজিস্টের শরনাপন্ন হতে পারেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না!