ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধের ১০টি কার্যকর উপায়
ঠান্ডা লাগা একটি সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ যা শ্বাসযন্ত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে। এই সংক্রমণের ফলে হাচি, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠান্ডা সাধারণত ১০-১৪ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
তবে সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার অভাবে এটি বড় ধরনের কোনো রোগের সৃষ্টিও করতে পারে। আর এখন যেহেতু শীত পড়ে গেছে এসময় এমন অনেকে আছে যারা ঠান্ডার দ্বারা প্রচুর ভোগান্তির শিকার হয়ে থাকেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা ঠান্ডা প্রতিরোধের ১০টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে জানবো যা আমাদের এই শীতে ঠান্ডার হাত থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে।
আলোচ্য বিষয়
- ঠান্ডা লাগার কারন
- ঠান্ডা প্রতিরোধের ১০টি কার্যকর উপায়
- করোনাভাইরাস (Coronavirus) প্রতিরোধের উপায়
- কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
- আমাদের শেষ কথা
ঠান্ডা লাগার কারণ
ঠান্ডা লাগার বহু কারণ থাকতে পারে। তবে কারণ যাই হোকনা কেনো ঠান্ডা লাগার পিছনে সবচেয়ে বড় কারন হলো ভাইরাসের আক্রমণ। ঠান্ডা লাগার জন্য দায়ী ভাইরাসগুলির মধ্যে রয়েছে রাইনোভাইরাস (Rhinovirus), অ্যাডেনোভাইরাস (Adenovirus), রেসপিরেটরি সিন্সাইটিয়াল ভাইরাস (Respiratory syncytial virus) ইত্যাদি। বর্তমানে ঠান্ডা লাগার পিছনে দায়ী আরেকটি নতুন ভাইরাসের নাম করোনাভাইরাস (coronavirus).
এই ভাইরাসগুলি সাধারণত একজন ব্যক্তির নাক, গলা এবং মুখের শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে। এই ক্ষতিকর সংক্রমণের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং সর্দি, হাঁচি, কাশি, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
আরো পড়ুন:
ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধের ১০টি কার্যকর উপায়
চলুন এবার জেনে নেই আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল টপিক ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধের ১০টি পয়েন্ট সম্পর্কে।
ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকর উপায় হলো:
১. হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন:
ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ পদক্ষেপ হলো হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করা। কারণ, ঠান্ডা লাগার জন্য দায়ী ভাইরাসগুলো হাতের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। তাই, আপনার হাত সবসময় পরিষ্কার রাখা উচিত। হাত ধুয়ে ফেলার সময় সাবান এবং গরম পানি ব্যবহার করুন। কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিন। বাইরে থেকে এসে বা কোনোকিছু খাবার আগে অবশ্যই আগে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিন।
২. মুখ ঢাকা রাখুন:
আপনি যখন কাশি বা হাঁচি দেবেন তখন আপনার মুখ এবং নাক একটি রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখুন। রুমাল ব্যবহার না করলে আপনার হাত দিয়ে মুখ এবং নাক ঢেকে রাখুন। পরে হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে যাবে।
৩. অসুস্থ মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকুন:
ঠান্ডার সমস্যার পিছনে যেহেতু ভাইরাসের সংক্রমন দায়ী তাই অনেকসময় এটি একজনের কাছ থেকে অন্য কারো সংক্রমনের কারণ হতে পারে। তাই যদি আপনার পরিচিত কারো ঠান্ডার সমস্যা থাকে বা অসুস্থ থেকে থাকে তাহলে তার কাছ থেকে কিছুটা স্বাভাবিক দূরত্বে থাকুন। এতে করে আপনার অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা কমাতে পারবেন।
৪. প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করুন:
ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। তাই, আপনি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন কমলা, লেবু, পেয়ারা, মালটা, বড়ই, কামরাঙাসহ বিভিন্ন টক ফল খেতে পারেন। এতে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা কিছুটা কমে যাবে।
৫. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন:
পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্তপূর্ণ একটি খনিজ উপাদানের উৎস। পানি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শরীরকে পরিশোধিত করে থাকে। পানি শরীরের বর্জ্যকে সঠিকভাবে নিষ্কাশন করে পাশাপাশি শরীরে রোগের প্রকোপকে কমাতে সাহায্য করে। তাই, প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করুন।
৬. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন:
ঠান্ডা প্রতিরোধের জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্তপূর্ণ। পর্যাপ্ত বিশ্রাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। তাই, প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।
৭. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন:
ধূমপান ও মদ্যপান বিশেষ করে অ্যালকোহল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। তাই, ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে হলে ধূমপান ও মদ্যপান অবশ্যই ত্যাগ করুন।
৮. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামও কিন্ত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে! তাই, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ধরে যেকোনো শারীরিক ব্যায়াম করুন। এটা হতে পারে সাধারণ হাটা, ভারোত্তোলন, জগিং বা যেকোনো ব্যায়াম!
৯. আপনার ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন:
ঠান্ডার ভাইরাসগুলো ধুলাবালি ও ময়লার মাধ্যমে আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। আপনার ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। ঘরের দরজা-জানালা এমনভাবে খোলা রাখুন যাতে ঠিকভাবে আলো ও বাতাস চলাচল করতে পারে।
১০. ঠান্ডা লাগলে মাস্ক পড়ুন এবং ঘরেই থাকার চেষ্টা করুন:
ঠান্ডা লাগলে বাইরে বের না হওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ, এতে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই ঠান্ডা লেগে গেলে যথাসম্ভব কম বাইরে যান এবং খুব বেশি প্রয়োজন হলে মাস্ক পরিধান করে বাইরে যান।
করোনাভাইরাস (Coronavirus) প্রতিরোধের উপায়
বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমলেও (Coronavirus) এটি এখনো একটি আতংকের নাম। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন;
- মাস্ক ব্যবহার করুন: করোনাভাইরাস মুলত নাক ও মুখের মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে থাকে তাই যখনি বাইরে যাবেন মাস্ক পরিধান করুন।
- অপ্রয়োজনীয় ভ্রমন থেকে বিরত থাকুন: ভিড় থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে তাই যথাসম্ভব ভিড় বা জনসমাগম এড়িয়ে চলুন।
- গরম পানি পান করুন: গরম পানি শাসতন্ত্রে ভাইরাস দ্বারা তৈরি হওয়া শ্লেষা বা ঝিল্লিকে নষ্ট করে তাই নিয়মিত গরম পানি পান করুন এতে করোনাভাইরাসসহ যেকোনো ভাইরাসের সংক্রমন থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
- নাকে ও মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন: করোনাভাইরাস থেকে রেহাই পেতে অযথা নাকে ও মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। নাকে ও মুখে হাত দেয়ার আগে আগে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার ধুয়ে নিন।
- নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখুন: নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখুন কেননা করোনাভাইরাস সহ যেকোনো ভাইরাসের সংক্রমন অনেকসময় হাত এর মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
এ অংশে কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর সংযোজন করা হলো।
প্রশ্ন ১: ঠান্ডা লাগা কি প্রতিরোধ করা সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ, ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করা সম্ভব। উপরের উল্লেখিত উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনি ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে পারেন। তবে, এটি মনে রাখতে হবে যে, ঠান্ডা লাগা সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কারণ, ঠান্ডা লাগার জন্য দায়ী বিভিন্ন ভাইরাসগুলো খুবই সংক্রামক।
প্রশ্ন ২: ঠান্ডা প্রতিরোধে কোন উপায়টি সবচেয়ে কার্যকর?
উত্তর: ভালোভাবে হাত ধোয়া ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কারণ, ঠান্ডা লাগার জন্য দায়ী ভাইরাসগুলো সাধারণত হাতের মাধ্যমেই ছড়িয়ে থাকে। তাই, আপনার হাত সবসময় পরিষ্কার রাখা উচিত।
প্রশ্ন ৩: ঠান্ডা লাগলে কী করবেন?
উত্তর: ঠান্ডা লেগে গেলে আপনি নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারেন:
- প্রচুর পরিমাণে পানি ও অন্যান্য তরল পান করুন।
- পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নিন।
- গরম পানীয় যেমন আদা-চা, লেবু-চা, ইত্যাদি পান করুন।
- হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করুন।
- ঠান্ডা খাবার যেমন; আইসক্রিম, কোল্ড কফি, ঠান্ডা কোমল পানীয়সহ যেকোনো ঠান্ডা খাদ্য গ্রহন থেকে বিরত থাকুন।
- বেদনানাশক বা প্যারাসিটামল ওষুধ সেবন করুন।
- যদি উপসর্গগুলি তীব্র হয় তাহলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আমাদের শেষকথা
ঠান্ডা লাগা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি কখনো কখনো বেশ ভোগান্তির ও বিরক্তির কারণ হতে পারে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার কিছু উপায় আলোচনা করেছি। উপরে উল্লেখিত উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনি ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে পারবেন এবং যদি ঠান্ডা লাগে তাহলে উপসর্গগুলি দ্রুত দূর করতে পারবেন বলে আশা করছি। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি প্রয়োজনীয় মনে হলে কমেন্টে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না!