Health TipsOthers

ওজন বাড়ানোর উপায়

ওজন বেশি হোক বা কম দুটোই শরীরের জন্য হতে পারে ক্ষতির কারণ। যদি কোনো ব্যক্তির বিএমআই ১৮ এর নিচে হয়ে থাকে তবে তার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম বলে ধরা হয়। একজন আন্ডারওয়েট ব্যক্তি নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। এছাড়া ওজন কম থাকার কারণে অনেকেই হতাশা ও হীনমন্যতায় ভুগে থাকেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করবো ওজন কম থাকার কারণ এবং ওজন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করতে।

আজকে যা জানব

  • ওজন কম থাকার কারণ
  • ওজন বাড়ানোর উপায়
  • ওজন বাড়ানোর খাদ্য তালিকা
  • ওজন বাড়ানোর ব্যায়াম
  • ওজন বৃদ্ধি সম্পর্কিত কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর 
  • আমাদের শেষ কথা

ওজন কম থাকার কারণ

ওজন কম থাকার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাব: ওজন বাড়াতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। অনেকেই সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে কম ওজনের হয়ে থাকেন। আপনি যদি আপনার শরীরের চাহিদার তুলনায় কম খাবার গ্রহন করেন তাহলে আপনার ওজন কম হবে এটাই স্বাভাবিক।

মানসিক চাপ: মানসিক চাপের কারণে শরীরের স্ট্রেস হরমোন প্রভাবিত হয়। এর ফলে ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম ও বিশ্রামের অভাবেও ওজন কমে যেতে পারে।

রোগ বা শারীরিক সমস্যা: কিছু রোগ বা শারীরিক সমস্যার কারণে ওজন কমে যেতে পারে। যেমন: থাইরয়েডের সমস্যা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ইত্যাদি।

ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ওজন বাড়ানোর উপায়

ওজন বাড়াতে হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন: ওজন বাড়াতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। আপনার খাদ্যতালিকায় উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার রাখুন। যেমন: মাছ, মাংস,ডিম, দুগ্ধজাতীয় খাবার,বাদাম, বীজ, শস্যজাতীয় খাবার (ভাত, আলু, ইত্যাদি),ফলমূল।

নিয়মিত খাবার খান: দিনে পাঁচ-ছয়বার ছোট ছোট খাবার খান। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শরীরের মেটাবলিজম কমে যায় এবং ওজন বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ওজন বাড়াতে হলে আপনার শরীরের চাহিদার চাইতে বেশি পরিমানের ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন, এবং প্রতিদিনের খাবারের সাথে অতিরিক্ত আরেকটি খাবারের সময় যুক্ত করুন।

সঠিক সময়ে খাবার খান: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খান। আপনি যদি খাবার সময়মতো খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে না পারেন তবে আপনার জন্য ওজন বৃদ্ধি কিছুটা কঠিন হতে পারে। সঠিক সময়মতো খাবার খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের মেটাবলিজম ঠিক থাকবে এবং ওজন বাড়ানো অনেকটাই সহজ হবে। 

শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন: অনেকেই শর্করাজাতীয় খাবার একেবারে কম গ্রহণ করেন। এটা মোটেও ঠিক নয়। ওজন বাড়াতে হলে অবশ্যই শর্করাজাতীয় খাবার বেশি পরিমানে গ্রহণ করতে হবে। শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। তাই ওজন বাড়াতে হলে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। প্রতিদিন আপনার শরীরের ওজনের প্রতি কেজির জন্য ৩-৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করুন।

প্রোটিন গ্রহণ করুন: প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্য পেশি ও মেদ গঠনে সাহায্য করে। তাই ওজন বাড়াতে হলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। যেমন; ডিম, মুরগি, মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি। 

খাবার গ্রহণের আগে পানি পান করুন: খাবার গ্রহণের আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। এতে খাবারের পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং আপনি বেশি ক্যালরি গ্রহণ করতে পারবেন। পাশাপাশি এটি আপনার মেটাবলিজম সিস্টেমের উন্নতিতেও সাহায্য করবে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন: অনেকেই ভাবেন ওজন বাড়ানোর জন্য কোনো ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। তবে এই ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল। ওজন কমাতে যেমন ব্যায়ামের প্রয়োজন তেমনি ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম করা জরুরি। শারীরিক ব্যায়াম শরীরের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা পরিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে ফুলে ক্ষুধার অনুভব তৈরি হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে পেশি গঠন হয় এবং ওজন বাড়ে। তবে ব্যায়াম করার সময় হালকা ওজনের ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে ওজন বাড়ান।

আরো পড়ুন

ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট

নিচে ওজন বাড়ানোর জন্য একটি সাধারণ ডায়েট চার্ট দেওয়া হলো:

  সকালের নাস্তা  দুপুরের খাবার        স্ন্যাকস  রাতের খাবার
দুধ বা দইভাত মৌসুমি ফল
 
ভাত
ওটমিল বা পাউরুটি মাছ বা মাংস বাদাম, বীজমাছ বা মাংস
ডিম বা ফল ডাল ও সবজি 
ভাজা খাবার; সিংগারা, সমূচা ইত্যাদি। সবজি ও ডাল
ওজন বৃদ্ধির ডায়েট চার্ট

এছাড়াও, আপনি প্রতিদিন অতিরিক্ত দু-তিন বার স্ন্যাকস খেতে পারেন।

ওজন বাড়ানোর ব্যায়াম 

এ অংশে ওজন বাড়ানোর জন্য কিছু ব্যায়াম দেয়া হলো।

স্কোয়াট: স্কোয়াট একটি অত্যন্ত কার্যকর ব্যায়াম যা শরীরের নিম্নভাগের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে। স্কোয়াট করার সময় পায়ের গোড়ালি থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত একটি সরল রেখা বজায় রাখুন। স্কোয়াট করার সময় শ্বাস ছাড়ুন এবং উঠতে শুরু করার সময় শ্বাস নিন।

ডেডলিফট: ডেডলিফট একটি আরেকটি অত্যন্ত কার্যকর ব্যায়াম যা শরীরের নিম্নভাগের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে। ডেডলিফট করার সময় পায়ের গোড়ালি থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত একটি সরল রেখা বজায় রাখুন। ডেডলিফট করার সময় শ্বাস ছাড়ুন এবং উঠতে শুরু করার সময় শ্বাস নিন।

প্রেস: প্রেস একটি ব্যায়াম যা শরীরের উপরের অংশের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে। প্রেস করার সময় শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখুন এবং শ্বাস ছাড়ুন।

প্রোলিং: প্রোলিং একটি ব্যায়াম যা শরীরের পিছনের অংশের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে। প্রোলিং করার সময় শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখুন এবং শ্বাস ছাড়ুন।

পুশ-আপ: পুশ-আপ একটি ব্যায়াম যা শরীরের উপরের অংশের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে। পুশ-আপ করার সময় শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখুন এবং শ্বাস ছাড়ুন।

ওজন বৃদ্ধি সম্পর্কিত কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর 

এ অংশে ওজন বৃদ্ধি সম্পর্কিত কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর দেয়া হলো।

প্রশ্ন ১: ওজন বাড়াতে কি কি উপায় অনুসরণ করতে পারি?

ওজন বাড়াতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করুন।

  • প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার যোগ করুন।
  • দিনে পাঁচ-ছয়বার ছোট ছোট খাবার খান।
  • প্রতিদিন দুধ, দই, মাখন, পনির, ডিম ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
  • বাদাম, বীজ, শুকনো ফল, চকোলেট ইত্যাদি স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন।
  • শর্করাজাতীয় খাবার নিয়মিত খেতে হবে তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেতে হবে না।
  • শক্তিবর্ধক ব্যায়াম করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুমান ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রনে রাখুন।

প্রশ্ন ২: ওজন বাড়ানোর সময় কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ? 

উত্তর: ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে সতর্কতাগুলো অবলম্বন করা উচিৎ সেগুলো হলো:

  • দ্রুত ওজন বাড়াতে গেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে হবে।
  • হাড়ের সমস্যা থাকলে ওজন বাড়াতে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের ফলে শরীরে চর্বি জমতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। 
  • ওজন বাড়াতে হলে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। তবে দ্রুত ওজন বাড়াতে গেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

আমাদের শেষ কথা

ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। দ্রুততার সাথে ওজন বাড়ালে এটি শরীরের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। তাই আমাদের উচিৎ ধীরে সুস্থে সঠিক পরিকল্পনার সাথে ওজন বৃদ্ধি করা যা স্থায়ী হবে এবং এতে আমাদের শরীরেরও কোন ক্ষতি হবেনা। আমাদের ওয়েবসাইটে “ওজন কমানোর উপায়” সম্পর্কে আমরা আগেই একটি পোস্ট করেছি। আজকের আর্টিকেলে আমরা ওজন বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে পাঠকগন কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।

BD Govt

B Govt. Com এর পক্ষ থেকে স্বাগতম। BD Govt সাইটে সরকারি সকল চাকরির খবর, শিক্ষামূলক তথ্য, স্বাস্থ্য টিপস, টেকনোলজি এবং বাংলাদেশের সরকারি তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button