কিভাবে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলবেন?
পেওনিয়ার (payoneer) হচ্ছে একটি স্মার্ট পেমেন্ট সিস্টেম যার মাধ্যমে একজন ফ্রিল্যান্সার বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের ক্লায়েন্টের কাছ থেকে নিজের পেমেন্ট খুব সহজে রিসিভ করতে পারে। যারা Fiverr, Upwork, Freelancer ইত্যাদির মতো মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন অথবা Amazon, Alibaba express ইত্যাদির সাথে এফিলিয়েট মার্কেটিং এ যুক্ত তাদের জন্য পেওনিয়ার একটি বেস্ট সল্যুশন হতে পারে।
পেওনিয়ারের সহজ ব্যবহার ও দ্রুত পেমেন্ট সেটেলমেন্টের সুবিধার কারণে এটি বর্তমানে পুরোবিশ্বে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আরেকটি জনপ্রিয় পেমেন্ট মেথড পেপাল (Paypal) ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়ে ওঠেনি। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার পদ্ধতি দেখিয়েছি যার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি ঘরে বসেই পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবেন। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই আমাদের আজকের আর্টিকেলটি।
আলোচ্য বিষয়
- পেওনিয়ার একাউন্টের প্রয়োজনীয়তা
- পেওনিয়ার একাউন্ট কিভাবে খুলবেন?
- পেওনিয়ার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট ক্রিয়েট
- বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম
- “পেওনিয়ার“ বিষয়ক কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
- আমাদের শেষ কথা
পেওনিয়ার একাউন্টের প্রয়োজনীয়তা
পেওনিয়ার আন্তর্জাতিক লেনদেনের একটি বিশ্বস্ত মাধ্যম। পেওনিয়ারের মাধ্যমে খুব সহজেই আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্ন করা যায়। তাই এটি বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক লেনদেনে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে পেপাল চলেনা সেখানে ফ্রিল্যান্সার সহ বিভিন্ন পেশাজীবি যারা অনলাইনে আন্তর্জাতিক ভাবে ডলারে পেমেন্ট নিয়ে থাকেন তাদের জন্য বেস্ট সল্যুশন হছে পেওনিয়ার। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা গুরুত্তপূর্ন।
পেওনিয়ার একাউন্ট কিভাবে খুলবেন?
আপনি পেওনিয়ার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারেন। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমেও পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার সুবিধা রয়েছে। পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে আপনার যা যা প্রয়োজন হবে সেগুলো হলো:
1.একটি স্মার্টফোন
2.একটি সচল বিকাশ একাউন্ট
3.জাতীয় পরিচয়পত্র
4.একটি ইমেইল অ্যাড্রেস
আরো পড়ুনঃ
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট ক্রিয়েট
আপনি চাইলে পেওনিয়ার ওয়েবসাইটে গিয়ে পেওনিয়ার একাউন্ট ওপেন করতে পারেন।
পেওনিয়ার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়মকানুন নিচে দেওয়া হল:
- প্রথমে পেওনিয়ারের ওয়েবসাইটে গিয়ে সাইন আপ এ ক্লিক করুন।
- ব্যাক্তিগত ব্যবহারের জন্য ইন্ডিভিজুয়াল এবং কোম্পানির জন্য হলে কম্পানি সিলেক্ট করুন।
- নিজের প্রথম ও শেষ নাম,ইমেইল এড্রেস,এবং জন্মসাল দিয়ে নেক্সট এ ক্লিক করুন।
- এবার কান্ট্রি,স্ট্রিট নাম্বার,এড্রেস,সিটি,জিপ কোড ইত্যাদি পূরণ করুন এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে সেন্ড কোডে ক্লিক করুন।
- মোবাইলে পাঠানো কোডটি দিয়ে নেক্সট এ ক্লিক করুন।
- এবার পাসওয়ার্ড সেট করে সিকিউরিটি প্রশ্ন ও উত্তর সেট করুন এবং আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার দিয়ে নেক্সট এ ক্লিক করুন।
- এবার কারেন্সি সিলেক্ট করে ব্যাংকের নাম,ব্র্যাঞ্চ,একাউন্ট হোল্ডারের নাম,একাউন্ট নাম্বার,আইডি নাম্বার ইত্যাদি পূরণ করুন এবং সাবমিট এ ক্লিক করুন।
এবার কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার একাউন্ট রেডি হয়ে যাবে এবং লগইন করে আপনি লেনদেন শুরু করতে পারবেন।
বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশ দিয়ে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়মকানুন নিচে দেওয়া হল:
- প্রথমে আপনার বিকাশ অ্যাপ থেকে একাউন্ট লগইন করে “রেমিট্যান্স” আইকনে ক্লিক করুন।
- পেওনিয়ার অপশনে “পেওনিয়ার একাউন্ট খুলুন” অপশনে ক্লিক করুন।
- ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে “ইন্ডিভিজুয়াল” আর কোম্পানির জন্য হলে “কোম্পানি” অপশন বেছে নিন।
- পেওনিয়ার ফর্মে নিজের নাম,ইমেইল ঠিকানা,জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য দিয়ে নেক্সট এ ক্লিক করুন।
- এবার কান্ট্রি নেম থেকে নিজের দেশ সিলেক্ট করুন এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে যে ঠিকানা রয়েছে সেই ঠিকানা দিন।
- সিটি বা টাউন এর নাম দিন এবং জিপকোড দিয়ে মোবাইল নাম্বার দিন।
- এবার সেন্ড কোড লেখায় ক্লিক করুন।
- আপনার মেসেজে পাঠানো কোডটি দিয়ে নেক্সট এ ক্লিক করুন।
- এবার পাসওয়ার্ড সেট করুন ও সিকিউরিটি প্রশ্ন সিলেক্ট করে ক্যাপচা পূরণ করুন।
এভাবে খুব সহজেই আপনি বিকাশ দিয়ে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবেন।
“পেওনিয়ার“ বিষয়ক কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
এ অংশে পাঠকের সুবিধার জন্য পেওনিয়ার বিষয়ক কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর সংযোজন করা হলো।
প্রশ্ন ১: পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার সময় কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে?
উত্তর: পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।
- আপনার প্রদানকৃত সমস্ত ব্যাক্তিগত তথ্য যেমন ; নাম, ঠিকানা, ইমেইল এড্রেস, ফোন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার ইত্যাদি সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করুন।
- আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদির স্ক্যান করা কপি স্পষ্ট কিনা তা নিশ্চিত করুন।
- সহজ এবং সবচেয়ে বেশি মনে রাখতে পারবেন এমন সিকিউরিটি প্রশ্নোত্তর যুক্ত করুন।
- আপনি যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তবে আপনার প্রদানকৃত ব্যবসা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করুন।
- একাউন্ট ওপেন করার পর আপনার একাউন্ট লগইন সংক্রান্ত তথ্যাবলি সংরক্ষনে রাখুন ও নিরাপদ রাখুন।
প্রশ্ন ২: পেওনিয়ার একাউন্টের লগইন তথ্য ভুলে গেলে কি একাউন্টটি ফেরত পাওয়া যাবেনা?
উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই। কোনোভাবে লগইন তথ্য ভুলে গেলেও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। একাউন্ট ওপেন করার সময় আপনার দেয়া সিকিউরিটি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে আপনি আপনার পেওনিয়ার একাউন্টের পাসওয়ার্ড রিসেট করে পুনরায় একাউন্ট লগইন করতে পারবেন।
প্রশ্ন ৩: পেওনিয়ার এর কি কি সুবিধা রয়েছে?
উত্তর: পেওনিয়ার এর কিছু সুবিধা হলো:
- একাউন্ট ওপেন করার পর তাৎক্ষনিকভাবেই লেনদেন শুরু করা যায়।
- সহজেই ব্যবহার করা যায়।
- পেওনিয়ার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি সাইট যার মাধ্যমে আপনি ১৯০ টির বেশি দেশে ৭০ টি মুদ্রায় লেনদেন করতে পারবেন।
- পেওনিয়ার এর মাধ্যমে মুদ্রা রুপান্তর কোনো চার্জ ছাড়াই বিনামূল্যে করা যায়।
প্রশ্ন ৪: পেওনিয়ার এর কোনো অসুবিধা আছে কি?
উত্তর: পেওনিয়ার এর অল্প কিছু অসুবিধা হলো:
- পেওনিয়ার একাউন্টের জন্য ইয়ারলি ২৯.৯৫ ডলার চার্জ করা হয় কিন্তু আপনি যদি ২০০০ ডলারের বেশি লেনদেন করে তবে এটি মওকুফ করা হয়।
- পেওনিয়ার মাস্টার কার্ডের জন্য প্রতি মাসে আলাদা ২.৯৫ ডলার চার্জ করা হয়।
- পেওনিয়ার একাউন্টের মাধ্যমে লেনদেনে কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে অর্থাৎ একাউন্ট হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
প্রশ্ন ৫: পেওনিয়ারে লেনদেন কি সম্পূর্ণ নিরাপদ?
উত্তর: পেওনিয়ারকে সাধারণভাবে একটি নিরাপদ পেমেন্ট সিস্টেম বলা যায়। পেওনিয়ার “payment card industry data security standard” দ্বারা প্রমানিত যা অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের মান উন্নতিতে কাজ করে থাকে। পেওনিয়ার গ্রাহকদের তথ্যকে সুরক্ষিত রাখতে “Secure Sockets Layer” ক্রিপ্টোগ্রাফির ব্যবহার করে থাকে।
তবুও বলবো, কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মকেই একেবারে নিরাপদ বলা যায়না কেননা এগুলো হ্যাক হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়! তবে পেওনিয়ার তার ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করে থাকে,পাশাপাশি ব্যবহারকারীদেরও তাদের তথ্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হতে হবে।
প্রশ্ন ৬: পেওনিয়ার একাউন্টকে সুরক্ষিত রাখতে কি কি করা যেতে পারে?
উত্তর: আপনার পেওনিয়ার একাউন্টকে সুরক্ষিত রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
- শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন অর্থাৎ পাসওয়ার্ডে বর্ণ,সংখ্যা,বিভিন্ন সাইন ইত্যাদির মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
- দুই ধাপের ভেরিফিকেশন চালু করুন এতে আপনার পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরও মোবাইলে পাঠানো ওটিপি ছাড়া একাউন্টে লগইন করা সম্ভব হবে না।
- নিয়মিত একাউন্ট পর্যবেক্ষণ করুন এবং কিছু যদি অস্বাভাবিক মনে হয় তবে দ্রুত পেওনিয়ারকে জানান।
আমাদের শেষ কথা
পেওনিয়ার একাউন্ট কোনো ফ্রিল্যান্সার, পেশাজীবী বা ব্যবসায়ীর জন্য দেশের বাইরে থেকে পেমেন্ট আদান প্রদানের ক্ষেত্রে খুবই দরকারি একটি হাতিয়ার। অনেকেই সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে পেওনিয়ার একাউন্ট ওপেন করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান তাই আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আমরা পেওনিয়ার একাউন্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্তপূর্ণ তথ্য দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে পাঠক উপকৃত হবেন। এতক্ষণ ধৈর্য্য সহকারে আমাদের সাথে থাকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।