OthersTechnology

প্যাসিভ ইনকামের আইডিয়াসমূহ| সেরা প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া

আলোচ্য বিষয়

  • ইনকাম (income) বা আয়ের ধরন 
  • প্যাসিভ (passive income) ইনকাম কি? প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কে ধারণা
  • প্যাসিভ ইনকাম এর প্রয়োজনীয়তা
  • প্যাসিভ ইনকামের সেরা আইডিয়াসমূহ
  • প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর 
  • শেষ কথা 

“প্যাসিভ ইনকাম (passive income)” শব্দটির সাথে আমরা অনেকেই হয়তো পরিচিত বা কেউ কেউ হয়তো ততটা পরিচিত নই। প্যাসিভ ইনকাম হচ্ছে আর্থিকভাবে ধনী ও সফল হওয়ার অন্যতম পন্থা। প্যাসিভ ইনকামের মাধ্যমে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

কি অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও কি টাকা উপার্জন করা যায়? হ্যাঁ সত্যিই। প্যাসিভ ইনকাম কিছুটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা উপার্জন করার মতোই বিষয়। তবে বিষয়টি একেবারেই সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা, সঠিক ও কার্যকরী পরিকল্পনা এবং অভিজ্ঞতা। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আপনি অবশ্যই প্যাসিভ ইনকামে সফল হবেন।

Photo credit : Google

আজকের আর্টিকেলে আমি প্যাসিভ ইনকামের (passive income) বিস্তারিত ধারণাসহ প্যাসিভ ইনকামের সহজ, সময়োপযোগী ও সেরা কিছু আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করবো যা জানা প্যাসিভ ইনকামে সফল হওয়ার জন্য জরুরি।

তবে চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা-

ইনকাম( income) বা আয়ের ধরন

চলুন প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কে জানার আগে আমরা আয়ের ধরন সম্পর্কে জেনে নেই।

ইনকাম সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে। ১.এক্টিভ ইনকাম (Active income) ২.প্যাসিভ ইনকাম (Passive income)।

এক্টিভ ইনকাম বলতে যেকোনো কাজে সবসময় সরাসরি সক্রিয় থেকে শ্রম ও সময় বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকে বোঝানো হয়। 

অন্যদিকে প্যাসিভ ইনকাম হচ্ছে এর বিপরীত। প্যাসিভ ইনকাম হচ্ছে আয়ের এমন একটি পন্থা যেখানে আপনাকে ক্রমাগত লেগে থেকে সময় ও শ্রম দিতে হবেনা। একবার কিছু অর্থ, সময় ও শ্রম ইনভেস্ট করে অনেক সময় ধরে উপার্জন করার পদ্ধতিকেই প্যাসিভ ইনকাম বলা হয়। 

প্যাসিভ (passive income) ইনকাম কি? প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কে ধারণা

সময় ও সেবা একবার বিনিয়োগ করে একরকম বসে বসে টাকা উপার্জন করার পদ্ধতিই প্যাসিভ ইনকাম।

চলুন এবার আমরা বোঝার চেষ্টা করি যে ঠিক কোন ধরনের ইনকাম আসলে প্যাসিভ ইনকাম।

ধরুন, আপনার একটি কাপড়ের দোকান রয়েছে যেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রি করে থাকেন। এখন ভেবে দেখুন আপনার এই দোকান থেকে ঠিক ততক্ষণই আয় হবে যতক্ষন আপনি দোকান খোলা রাখবেন! অর্থাৎ যদি কোন প্রয়োজনে আপনি একদিন দোকান বন্ধ রাখেন সেদিন আপনার ইনকামও বন্ধ থাকবে, তাই না? তাই দোকানের মাধ্যমে ইনকাম হচ্ছে “এক্টিভ ইনকাম “। যেখানে আপনাকে সরাসরি সক্রিয় থাকতে হচ্ছে।

অন্যদিকে এই প্রোডাক্টগুলো বিক্রি করার জন্য যদি আপনার একটি অনলাইন পেইজ থাকে তবে আপনি শুধু আপনার কাপড় ও ড্রেসের বিবরণসহ এগুলোর ছবি একবার আপলোড করে দিলেই হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে দোকানের মতো বিভিন্ন কাস্টমারকে বারবার প্রোডাক্ট বের করে দেখাতে হবেনা। যেকোনো কাস্টমার যেকোনো সময় আপনার প্রোডাক্ট দেখতে ও অর্ডার করতে পারবে। অর্থাৎ আপনি ঘুমিয়ে থাকলেও আপনার ভার্চুয়াল দোকান কিন্তু খোলাই রয়েছে! তাই এটি হচ্ছে প্যাসিভ ইনকাম। যেখানে আপনি ক্রমাগত লেগে থেকে সময় ও শ্রম দিচ্ছেন না!

আশা করছি, প্যাসিভ ইনকামের একটি পরিষ্কার ধারণা দিতে পেরেছি।

আরো পড়ুন:

প্যাসিভ ইনকামের প্রয়োজনীয়তা

পৃথিবীর অন্যতম একজন ধনী ও সফল বিনিয়োগকারী ব্যক্তি ওয়ারেণ বাফেট (Warren Buffett)’ এর উক্তি:

“if you don’t find a way to make money while you sleep, you will work until you die.”

যার অর্থ : যদি আপনি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা উপার্জন করতে না পারেন তবে আপনাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরিশ্রম করে যেতে হবে। 

এই উক্তি থেকে আমরা খুব সহজেই প্যাসিভ ইনকামের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারি। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের ধনী হওয়ার পেছনের রহস্যই এই প্যাসিভ ইনকাম।

সবাই টাকা ইনকাম করতে চায় সেটা এক্টিভ হোক বা প্যাসিভ। পড়াশোনা, চাকরি অথবা মূল ব্যবসার পাশাপাশি প্যাসিভ ইনকাম হতে পারে আপনার এক্সট্রা আয়ের উৎস। এক্টিভ ইনকামে যেহেতু আপনাকে লেগে থেকে কাজ করতে হয় সেহেতু আপনি অসুস্থ হলে বা অবসর নিলে আপনার ইনকামও বন্ধ হয়ে যাবে। 

এক্টিভ ইনকামের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিদিন একটা রুটিন বা নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়, তবে প্যাসিভ ইনকামের ক্ষেত্রে আপনি স্বাধীনভাবে যখন খুশি আপনার কাজ করতে পারেন। এছাড়া এক্টিভ ইনকামের ক্ষেত্রে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট অফিস বা কর্মস্থলে গিয়ে কাজ করতে হয়। অন্যদিকে প্যাসিভ ইনকাম করলে আপনি আপনার পছন্দসই জায়গায় থেকে কাজ করতে পারেন।

আপনার যদি প্যাসিভ ইনকামের একটি সোর্স থাকে তবে আপনি যেকোনো সময় আপনার মূল চাকরি বা ব্যবসা থেকে নিশ্চিন্তে রিটায়ার্মেন্টে যেতে পারেন, এক্ষেত্রে আপনাকে অন্য কারো উপর নির্ভরশীল হতে হবেনা। 

তাই এসকল বিষয় বিবেচনা করে প্রত্যেকেরই এক্টিভ ইনকামের পাশাপাশি প্যাসিভ ইনকামেরও সোর্স তৈরি করা উচিৎ। 

প্যাসিভ ইনকামের সেরা আইডিয়াসমূহ

এতক্ষন; তো জানলাম প্যাসিভ ইনকাম কি সে সম্পর্কে, এবার চলুন জেনে নেই কিছু সহজ ও সেরা প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া সম্পর্কে যা জেনে আপনিও তৈরি করতে পারেন আপনার প্যাসিভ ইনকামের উৎস। 

ইউটিউবিং (Youtubing)

তথ্য অনুসারে বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৫.১ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩%। তাই আপনার যদি কোন একটি বিষয়ে স্কিল থাকে তবে ইউটিউবিং হতে পারে আপনার জন্য প্যাসিভ ইনকামের সবচেয়ে সহজ ও সময়োপযোগী অপশন। বর্তমানে প্যাসিভ ইনকামের সবচেয়ে জনপ্রিয়, মজাদার ও তুলনামূলক সহজ উপায় এটি। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী যে কেউ এটি করতে পারে। 

ইউটিউবে একটি চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করে আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে খুব বেশি যে ঝামেলা পোহাতে হবে এমনটা নয়। যে বিষয়ে আপনার ভালো ধারণা আছে বা যে বিষয়ে আপনি পারদর্শী সেই বিষয় সম্পর্কিত ভিডিও আপনি আপনার চ্যানেলে আপলোড করতে পারেন। নিচে ইউটিউবের কিছু চ্যানেল ক্যাটাগরি নিয়ে আলোচনা করা হলো। 

কুকিং চ্যানেল 

আপনি যদি ভালো একজন রাঁধুনি হয়ে থাকেন তবে আপনি আপনার রান্নার ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন। এধরনের চ্যানেলের চাহিদা ইউটিউবে খুব বেশি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খাবার আইটেমসহ আপনার নিজস্ব ইউনিক রেসিপি শেয়ার করে আপনি ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করতে পারেন। 

ব্লগ চ্যানেল

ব্লগিং ইউটিউবের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ক্যাটাগরি। আপনার দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাবলীর কিছু অংশ ভিডিও আকারে আপলোড করতে পারেন। ব্লগিং এর মধ্যেও বেশ কিছু ক্যাটাগরি রয়েছে। যেমন ফুড ব্লগ, ট্রাভেল ব্লগ, লাইফস্টাইল ব্লগ ইত্যাদি।

কার্টুন চ্যানেল 

আপনি যদি কার্টুন বা অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরিতে পারদর্শী হয়ে থাকেন তবে আপনি চাইলে শিশুদের জন্য কার্টুন ভিডিও তৈরি করে আপনার চ্যানেলে আপলোড করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন রকমের শিক্ষামূলক বার্তা দিয়ে কার্টুন ভিডিও তৈরি করলে ছোট-বড় সব ধরনের দর্শকই আপনার ভিডিও দেখবে।

এইতো গেল কয়েকটি জনপ্রিয় চ্যানেল আইডিয়া। এগুলো ছাড়াও ইউটিউবের আরো অনেক ক্যাটাগরি রয়েছে যা সম্পর্কে গুগল করে আপনি আলাদাভাবে জানতে পারেন।

ভাড়াকৃত আয় (Rental income) 

আপনি যদি কোন জায়গার মালিক হয়ে থাকেন তাহলে সেখানে ভাড়া দেয়ার মতো কিছু নির্মাণ করে সেটির মাধ্যমেও আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। এটিও হতে পারে প্যাসিভ ইনকামের খুব ভালো মাধ্যম। শুধুমাত্র গ্যারেজ, ফ্ল্যাট ও দোকান ভাড়ার মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের দৈনন্দিন খরচ চালিয়ে নিচ্ছে অনায়াসেই!

কোর্স তৈরি করুন (create a course)

বর্তমানে এটি প্যাসিভ ইনকামের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। আপনার যদি এমন কোন বিষয়ে স্কিল থেকে থাকে যা শেখার আগ্রহ বহুলসংখ্যাক মানুষের মধ্যে রয়েছে  যেমন: কেক মেকিং, ফটো ও ভিডিও এডিটিং, ফ্রিল্যান্সিং, ইত্যাদি ; তাহলে আপনি সেই বিষয়ের উপর একটি অডিও বা ভিডিও কোর্স তৈরি করে এটি অনলাইন ও অফলাইনে সেল করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে কোর্সটি শুধুমাত্র একবার তৈরি করতে হচ্ছে, কিন্তু এ থেকে আপনার ইনকাম হতে থাকবে বার বার।

ব্লগিং (blogging)

আপনি যদি লেখালেখি করতে ভালোবাসেন তাহলে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে এতে ব্লগ বা আর্টিকেল রাইটিং এর মাধ্যমেও আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (এস.ই.এম) সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিতে হবে। 

প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর 

নিচে প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর সংযোজন করা হলো :

প্যাসিভ ইনকামের সবচেয়ে ভালো উপায় কোনটি?

প্যাসিভ ইনকাম করার কিছু জনপ্রিয় এবং ভালো-ভালো উপায় নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এই সবগুলো থেকেই আপনি খুব ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন। আপনার যে উপায়টি সুবিধাজনক মনে হয় আপনি সেটিই শুরু করতে পারেন। 

প্যাসিভ ইনকামের মাধ্যমে কি লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হওয়া সম্ভব? 

উত্তর হবে হ্যাঁ। এমন অনেকেই আছেন যারা প্যাসিভ ইনকামের মাধ্যমে শুধু লক্ষ নয় কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চাকরি নয় বরং প্যাসিভ ইনকামই হলো বিভিন্ন ধনী ও সফল ব্যক্তিদের ইনকাম সিক্রেট। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সঠিক দিক নির্দেশনার সাথে সঠিক পথে এগোতে হবে। প্যাসিভ ইনকামের ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য করতে হবে কঠোর পরিশ্রমও! তবেই আপনি প্যাসিভ ইনকামে সফল হতে পারবেন।

শেষ কথা, 

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি প্যাসিভ ইনকাম কি, প্যাসিভ ইনকামের প্রয়োজনীয়তা এবং সেরা ও জনপ্রিয় কিছু প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে। আশা করি আর্টিকেলটি সবার উপকারে আসবে। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এতক্ষণ আমাদের পাশে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি উপকারী মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না!

BD Govt

B Govt. Com এর পক্ষ থেকে স্বাগতম। BD Govt সাইটে সরকারি সকল চাকরির খবর, শিক্ষামূলক তথ্য, স্বাস্থ্য টিপস, টেকনোলজি এবং বাংলাদেশের সরকারি তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button