প্যাসিভ ইনকামের সেরা ১০টি আইডিয়া
ইনকাম বা আয় মুলত দুই ধরনের, এক্টিভ ও প্যাসিভ ইনকাম। সরাসরি কাজ বা প্রতিষ্ঠানের সাথে লেগে থাকে যে ইনকাম আসে তা হলো এক্টিভ ইনকাম। আর প্যাসিভ ইনকাম হলো এমন একটি আয় যেখানে একবার কাজ করে রেখে দিলে তারপর অবিরত সেখান থেকে ইনকাম আসতে থাকে। অর্থাৎ আপনাকে সবসময় সেখানে কাজ করতে হবে না। সকল সফল ব্যক্তিদের সফলতার পিছনে রয়েছে এই “প্যাসিভ ইনকাম”।
পৃথিবীর অন্যতম একজন ধনী ও সফল বিনিয়োগকারী ব্যক্তি ওয়ারেণ বাফেট (Warren Buffett)’ এর একটি উক্তি হলো :
“If you don’t find a way to make money while you sleep, you will work until you die.”
এর অর্থ হলো: “যদি আপনি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা উপার্জন করতে না পারেন তবে আপনাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরিশ্রম করে যেতে হবে”।
এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে প্যাসিভ ইনকাম কিছুটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা উপার্জন করার মতো বিষয়।
প্যাসিভ ইনকাম করার অনেক উপায় রয়েছে। তবে সবগুলো উপায় সবার জন্য উপযুক্ত নয়। আপনার দক্ষতা, আগ্রহ এবং বিনিয়োগের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে আপনি প্যাসিভ ইনকামের উপযুক্ত উপায় নির্বাচন করতে পারেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি বর্তমান সময়ের সেরা ১০টি প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই আমাদের আজকের আর্টিকেলটি।
আলোচ্য বিষয়:
- ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করুন
- ব্লগ তৈরি করুন
- ই-বুক প্রকাশ করুন
- ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করুন
- জনপ্রিয় স্থানে বিজ্ঞাপন দিন
- শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করুন
- রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ করুন
- লিজিং ব্যবসা শুরু করুন
- এফিলিয়েট মার্কেটিং করুন
- কোনো ব্যবসার অংশীদার হন
- প্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্নোত্তর
- আমাদের শেষ কথা
১. ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করুন
ইউটিউব হল বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। আপনার যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান বা দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনি সেই বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন। যদি আপনার ভিডিওগুলো জনপ্রিয় হয়, তাহলে আপনি বিজ্ঞাপন থেকে আয় করতে পারবেন। কুকিং, লাইফস্টাইল ভ্লগিং বা যেকোনো স্কিল সম্পর্কে ইউটিউবে ভিডিও বানিয়ে এখন অনেকেই ভালো মানের ইনকাম জেনারেট করছে ও সাবলম্বী হচ্ছে।
২. ব্লগ তৈরি করুন
ব্লগ তৈরি করেও আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। আপনার যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আগ্রহ থাকে, তাহলে আপনি সেই বিষয়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে পারেন। আপনার ব্লগে লেখালেখি করে আপনি বিজ্ঞাপন থেকে আয় করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি আপনার ব্লগে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেও আয় করতে পারেন।
আরো পড়ুন:
- মোবাইলে রেজাল্ট দেখার নিয়ম
- শীতে ত্বক ও চুলের পরিচর্যা
- পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য সেরা ১০টি উপায়
৩. ই-বুক প্রকাশ করুন
আপনার যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান বা দক্ষতা থাকে, এবং লেখালেখিতে ভালো পারদর্শীতা থাকে তাহলে আপনি সেই বিষয়ে একটি ই-বুক প্রকাশ করতে পারেন। এই ই-বুক বিক্রি করে আপনি আয় করতে পারেন। ই-বুক প্রকাশ করতে খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়না। এছাড়াও, আপনি আপনার ই-বুকের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেও আয় করতে পারেন।
৪. ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করুন
আপনি যদি কোনো ডিজিটাল পণ্য তৈরি করতে পারেন, তাহলে আপনি সেই পণ্য বিক্রি করে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। ডিজিটাল পণ্যের মধ্যে রয়েছে থিম, ওয়ালপেপার, মিউজিক, ভিডিও, ইত্যাদি। এছাড়াও আপনার যদি কোনো বিষয়ে স্কিল থাকে যার চাহিদা আছে, এমন স্কিলগুলোর কোর্স তৈরি করে সেটি অনলাইনে বিক্রির মাধ্যমেও আপনি ইনকাম করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে কোর্সটি শুধুমাত্র একবার তৈরি করতে হবে, কিন্ত এটি বিক্রি করে আপনি ইনকাম করবেন বার বার।
৫. মেট্রো স্টেশন বা অন্যান্য জনপ্রিয় স্থানে বিজ্ঞাপন স্থাপন করুন
আপনি ব্যবসার বিজ্ঞাপন মেট্রো স্টেশন বা অন্যান্য জনপ্রিয় স্থানে স্থাপন করে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।
মেট্রো স্টেশন বা জনপ্রিয় স্থানে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্যাসিভ ইনকাম করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি ভালো জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। এই জায়গাটি অবশ্যই জনবহুল হওয়া উচিত, যাতে আপনার বিজ্ঞাপন বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। এরপর আপনাকে বিজ্ঞাপনের জন্য একটি আকর্ষণীয় ধারণা তৈরি করতে হবে। বিজ্ঞাপনটি এমন হতে হবে যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তাদের মনে রাখে।
একবার আপনার জায়গা এবং ধারণা ঠিক হয়ে গেলে, আপনাকে বিজ্ঞাপন প্রদানকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এই সংস্থাগুলি আপনাকে আপনার বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য একটি চুক্তি প্রদান করবে। চুক্তিতে বিজ্ঞাপনের সময়কাল, বিজ্ঞাপনের আকার এবং খরচ উল্লেখ থাকবে।
বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের পর, আপনি প্রতি মাসে বা বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারবেন। এই অর্থটি আপনার বিজ্ঞাপনের সময়কাল এবং বিজ্ঞাপনের আকার অনুসারে পরিবর্তিত হবে।
৬. শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করুন
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। শেয়ার বাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করলে আপনি ভালো লাভ করতে পারেন। তবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে গবেষণা করে নিন।
৭. রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ করুন
রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ করেও আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। আপনি যদি কোনো সম্পত্তি কিনে তা ভাড়া দেন, তাহলে আপনি ভাড়া থেকে আয় করতে পারেন।
৮. লিজিং ব্যবসা শুরু করুন
আপনি যদি কোনো মেশিন বা সরঞ্জামের মালিক হন, তাহলে আপনি সেগুলো লিজিং ব্যবসা শুরু করে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। লিজিং ব্যবসা হল এমন একটি ব্যবসা যেখানে একটি প্রতিষ্ঠান (লিজিং কোম্পানি) অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে (লিজগ্রহীতা) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যে সম্পত্তি বা সরঞ্জাম ভাড়া দেয়। লিজিং কোম্পানি সম্পত্তি বা সরঞ্জামের মালিক হয় এবং লিজগ্রহীতা শুধুমাত্র এর ব্যবহারের অধিকার পায়।
৯. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করুন
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল এমন একটি মার্কেটিং পদ্ধতি যেখানে আপনি কোনো পণ্য বা পরিষেবার বিজ্ঞাপন প্রচার করে বিক্রি করলে আপনি একটা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ কমিশন পাবেন। Amazon, Flipkart, Shopup, Alibaba, Daraz ইত্যাদির সাথে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেও কিন্তু আপনি খুব ভালো মানের একটি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।
১০. কোনো ব্যবসার অংশীদার হন
আপনি যদি কোনো ব্যবসার মালিকের সাথে অর্থ বা পুঁজি দিয়ে অংশীদার হন তাহলে আপনি সেই ব্যবসা থেকে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর
নিচে প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর সংযোজন করা হলো।
প্রশ্ন ১। প্যাসিভ ইনকাম কি?
উত্তর: প্যাসিভ ইনকাম হল এমন একটি আয় যা নিয়মিত এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসে। এটি এমন একটি আয় যা আপনি কাজ না করেও উপার্জন করতে পারেন।
প্রশ্ন ২। প্যাসিভ ইনকামের সুবিধা কী?
উত্তর: প্যাসিভ ইনকামের অনেক সুবিধা রয়েছে। এরমধ্যে কিছু নিচে উল্লেখ করা হলো।
- আপনার আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে সাহায্য করবে।
- আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।
- আপনার অবসর সময় উপভোগ করতে সাহায্য করতে পারে।
- আপনার বাড়তি আয়ের উৎস হতে পারে।
প্রশ্ন ৩। প্যাসিভ ইনকামের অসুবিধা কী?
উত্তর: প্যাসিভ ইনকামের কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
- প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে।
- কিছুটা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন।
- প্রথম অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে সময় এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন হতে পারে।
প্রশ্ন ৪। প্যাসিভ ইনকামের জন্য কোন ধরনের বিনিয়োগ করা যেতে পারে?
উত্তর: প্যাসিভ ইনকামের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
শেয়ার বাজার: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে আপনি ডিভিডেন্ড ইনকাম এবং ইক্যুইটি বৃদ্ধি থেকে লাভবান হতে পারেন।
সম্পত্তি বিনিয়োগ: সম্পত্তি বিনিয়োগ করে আপনি ভাড়া থেকে আয় করতে পারেন।
লিজিং ব্যবসা: লিজিং ব্যবসা করে আপনি ভাড়া থেকে আয় করতে পারেন।
অনলাইন ব্যবসা: অনলাইন ব্যবসা করে আপনি পণ্য বিক্রয় বা পরিষেবা প্রদান করে আয় করতে পারেন।
কপিরাইটিং: কপিরাইটিং করে আপনি লেখালেখি করে আয় করতে পারেন।
ব্লগিং: ব্লগিং করে আপনি বিজ্ঞাপন থেকে আয় করতে পারেন।
প্রশ্ন ৫। প্যাসিভ ইনকাম অর্জনের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
উত্তর: প্যাসিভ ইনকাম অর্জনের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
- আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনি কত টাকা আয় করতে চান এবং কত ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক তা নির্ধারণ করুন।
- আপনি যে বিনিয়োগের বিকল্পগুলি বিবেচনা করছেন সেগুলি সম্পর্কে গবেষণা করুন।
- আপনার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করুন। আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করবেন এবং কীভাবে আপনার বিনিয়োগগুলি পরিচালনা করবেন তা পরিকল্পনা করুন।
- ধৈর্য ধরুন। প্যাসিভ ইনকাম অর্জনের জন্য সময় এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন।
প্যাসিভ ইনকাম অর্জনের জন্য কোন একক সঠিক পদ্ধতি নেই। আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো পদ্ধতিটি আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য, আর্থিক পরিস্থিতি এবং ঝুঁকি সহনশীলতার উপর নির্ভর করবে।
আমাদের শেষ কথা
পড়াশোনা বা মূল চাকরির পাশাপাশি প্যাসিভ ইনকাম হতে পারে আপনার বাড়তি আয়ের উৎস। আজকের আর্টিকেলে আমরা প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কিত ১০টি জনপ্রিয় আইডিয়া সংক্ষিপ্ত আকারে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পাঠকের উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!