ফেইসবুক মার্কেটিং কেন করবেন? ফেইসবুক মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা জানুন।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মধ্যে ফেইসবুক মার্কেটিং একটি জনপ্রিয় মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। বর্তমানে ফেইসবুক অত্যন্ত জনপ্রিয় সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় এটিকে মার্কেটিং সিস্টেম হিসেবে খুব সহজেই ব্যবহার করা যাচ্ছে, পাশাপাশি লাভজনক ফলাফলও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রযূক্তির কল্যানে এখন লক্ষ লক্ষ টাকার বিজনেস বিভিন্ন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের শিরোনাম দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, আমরা আজকে কি টপিক নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি? হ্যাঁ , ঠিকই ধরেছেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলের টপিক হলো ‘ফেইসবুক মার্কেটিং’। আজকের আর্টিকেলে আমরা ফেইসবুক মার্কেটিং কি, ফেইসবুক মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা কি, ফেইসবুক মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে ইত্যাদি; বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো চলুন, কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেলটি।
আলোচ্য বিষয়
- ফেইসবুক মার্কেটিং কি?
- ফেইসবুক মার্কেটিং এর সুবিধা
- ফেইসবুক মার্কেটিং কিভাবে করবেন?
- ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
- আমাদের শেষ কথা
ফেইসবুক মার্কেটিং কি?
ফেইসবুক মার্কেটিং কিভাবে করবো বা কেন করবো সেসবকিছু জানার আগে ভালোভাবে জেনে নেয়া দরকার যে, ফেসবুক মার্কেটিং আসলে কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে থাকে এই বিষয়ে।
ফেইসবুক একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মূলত ফেইসবুক মার্কেটিং হলো একটি অনলাইন মার্কেটিং কৌশল যা ফেসবুক প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা পরিষেবা প্রচার করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ফেইসবুক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে, কোম্পানীগুলি তাদের টার্গেট দর্শকদের কাছে তাদের পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, ট্র্যাফিক তৈরি করা, গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা এবং বিক্রয় বাড়াতে পারে।
এখন আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি যে, ফেইসবুক মার্কেটিং আসলে কি এবং একটি ব্যবসার প্রচারনায় এটি কিভাবে কাজ করে? ফেইসবুক মার্কেটিং অন্যান্য মার্কেটিং প্রক্রিয়াগুলোর মতোই একটি মার্কেটিং কৌশল যা ফেইসবুক সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে করা হয়।
ফেইসবুক মার্কেটিং এর সুবিধা
এবার নিশ্চয়ই আপনার মনে এই প্রশ্নটা আসছে যে, কেন ব্যবসার প্রচারনায় ফেইসবুক মার্কেটিং করবো? ফেইসবুক মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা কি, তাইতো? চিন্তা নেই আমরা এবার এই সম্পর্কেই আলোচনা করবো।
ফেইসবুক মার্কেটিং এর অনেক সুবিধা রয়েছে, নিচে এরকম কিছু সুবিধা তুলে ধর হলো যার মাধ্যমে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, একটি ব্যবসার প্রচারনায় ফেইসবুক মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা কতখানি।
- বিপুল পরিমান দর্শক : ফেইসবুক বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলির মধ্যে একটি, যার প্রায় ৩.৬৯ বিলিয়ন মাসিক ইউজার রয়েছে। এই বিশাল পরিমান অডিয়েন্স এর কারণে, ফেসবুক মার্কেটিং যেকোনো ব্যবসার পণ্য বা পরিষেবা বিষয়ক তথ্য খুব অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক লোকের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম।
- টার্গেট করার সুযোগ: ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, আগ্রহ এবং অন্যান্য বিষয়গুলির ভিত্তিতে টার্গেট করার মাধ্যমে মার্কেটিং করা যেতে পারে। এটি যেকোনো ব্যবসার জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট। এর অর্থ হল যেকোনো প্রতিষ্ঠানে তাদের ব্যবসার বিজ্ঞাপনগুলি এমন লোকেদের কাছে প্রদর্শন করতে পারে যারা তাদের পণ্য বা পরিষেবাগুলির জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহী।
- স্বল্পব্যয়ী : ফেইসবুক মার্কেটিং বিভিন্ন ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশলগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যায়বহূল। এটিও ফেইসবুক মার্কেটিং এর খুব বড় একটি সুবিধা।
তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ফেইসবুক মার্কেটিং এর সুবিধা কতখানি?
ফেইসবুক মার্কেটিং কিভাবে করবেন?
এবার চলুন জেনে নেয়া যাক, কিভাবে একটি ব্যবসার জন্য ফেইসবুক মার্কেটিং করবেন।
ফেইসবুক মার্কেটিং শুরু করার জন্য, প্রথমেই আপনাকে একটি প্রফেশনাল ফেইসবুক পেজ তৈরি করতে হবে। এরপরে, আপনি আপনার পেজে বিভিন্ন পোস্ট, ভিডিও, ইমেল, ইত্যাদি শেয়ার করে ফ্রি ফেইসবুক মার্কেটিং করতে পারেন। ফেইসবুক মার্কেটিং এর জন্য আপনি ফেসবুক বিজ্ঞাপনও ব্যবহার পারেন, যা আপনাকে আপনার লক্ষ্য দর্শকদের কাছে আপনার বিজ্ঞাপনগুলি আরও সঠিকভাবে টার্গেট করতে সাহায্য করবে।
আমি বলবো যেকোনো মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেই আগে ফ্রি পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা উচিৎ। ফেইসবুক মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। ফ্রি ফেইসবুক মার্কেটিং করার জন্য, আপনি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- আপনার পেজের জন্য একটি আকর্ষণীয় এবং তথ্যপূর্ণ কভার ফটো এবং প্রোফাইল ছবি ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলবেন
- নিয়মিত আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সংবলিত পোস্ট করুন এবং আপনার পোস্টগুলিতে আকর্ষণীয় ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করুন।
- আপনার পোস্টগুলিকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন ছবি, ভিডিও ও গুরুত্তপূর্ণ তথ্য ব্যবহার করুন।
- আপনার পোস্টের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ব্যবহারকারীদের সাহায্য করুন। এক্ষেত্রে তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে উত্সাহিত হবে। আপনি আপনার প্রোডাক্ট বিষয়ক প্রশ্নোত্তর দিতে পারেন।
এবার চলুন জেনে নেই, কিভাবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মার্কেটিং করবেন। ফেসবুক বিজ্ঞাপন চালানোর জন্য, আপনি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে পারেন:
- আপনার এড ক্যাম্পেইন তৈরি করুন।
- আপনার টার্গেট অডিয়েন্স নির্ধারণ করুন।
- আপনার বিজ্ঞাপনের বার্তা এবং নকশা তৈরি করুন।
- আপনার বিজ্ঞাপনের বাজেট এবং সময় নির্ধারণ করুন।
ফেইসবুক মার্কেটিং এর জন্য বিভিন্ন অনলাইন এড এজেন্সি রয়েছে যারা ফেইসবুক পেইজ বুস্টিং এর কাজ করে থাকে। আপনি আপনার প্রফেশনাল পেইজটিকে বুস্ট করতে এরকম কোনো এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন তারা আপনার টার্গেট অনুযায়ী আপনার পেইজকে বুস্ট করার মাধ্যমে আপনার সেল বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
এ অংশে ফেইসবুক মার্কেটিং সম্পর্কিত বহূল জিজ্ঞাসিত কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর সংযোজন করা হলো।
প্রশ্ন ১। ফেইসবুক মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে থাকে?
উত্তর: ফেইসবুক মার্কেটিং আপনার বিজ্ঞাপনগুলো এমন লোকেদের কাছে প্রদর্শন করে থাকে যারা আপনার পণ্য বা পরিষেবাগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি পরিমানে আগ্রহী। ফেইসবুক বিজ্ঞাপনের জন্য তার ইউজারদের বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, আগ্রহ এবং অন্যান্য বিষয়গুলির ভিত্তিতে টার্গেট করে থাকে। ধরুন আপনি বাচ্চাদের কোনো হোম মেইড খাবার সেল করছেন, সেক্ষেত্রে ফেইসবুক তাদেরকেই টার্গেট করবে যাদের ছোট বাচ্চা রয়েছে। ফেইসবুক ইউজারদের বিভিন্ন সার্চ এলগরিদম রিসার্চ করার মাধ্যমে এই টার্গেটিং করে থাকে।
প্রশ্ন ২। ফেইসবুক মার্কেটিং এর জন্য কেমন খরচ হয়ে থাকে?
উত্তর: ফেইসবুক মার্কেটিং এর খরচ নির্ভর করে আপনার লক্ষ্য, টার্গেট দর্শক এবং বিজ্ঞাপনের ধরন ইত্যাদির উপর। ফেইসবুকে আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী আপনার বিজ্ঞাপনের খরচ নির্ধারণ করতে পারেন।
তবে, ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং কিন্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। আপনি আপনার পেজে পোস্ট, ভিডিও, ইমেল, ইত্যাদি শেয়ার করে বিনামূল্যে আপনার লক্ষ্য দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারেন।
ফেইসবুক তার বিজ্ঞাপনের খরচ প্রতি ক্লিক (CPC) বা প্রতি দর্শক (CPM) ভিত্তিতে নির্ধারণ করে থাকে। CPC-এর পূর্নরুপ হলো ‘cost per click’. এর অর্থ হলো প্রতিবার কেউ আপনার বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে আপনাকে অর্থ প্রদান করবেন।
সাধারণত, ফেইসবুক বিজ্ঞাপনের খরচ প্রতি ক্লিক $0.01 থেকে $10 পর্যন্ত হতে পারে। CPM-এর খরচ প্রতি দর্শক $0.01 থেকে $100 পর্যন্ত হতে পারে।
আপনি আপনার বিজ্ঞাপনের খরচ কমাতে নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করতে পারেন:
- আপনার লক্ষ্য দর্শককে সঠিকভাবে টার্গেট করুন।
- আপনার বিজ্ঞাপনের বার্তা এবং নকশা আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক করুন।
- আপনার বিজ্ঞাপনের বাজেট এবং সময়সূচী সামঞ্জস্য করুন।
প্রশ্ন ৩। ফেইসবুক মার্কেটিং কিভাবে সফল হয়?
উত্তর: ফেইসবুক মার্কেটিং সফল হওয়ার জন্য, আপনাকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে মনোযোগ দিতে হবে:
- আপনার লক্ষ্য দর্শককে সঠিকভাবে টার্গেট করুন।
- আপনার বিজ্ঞাপনের বার্তা এবং নকশা আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক করুন।
- আপনার বিজ্ঞাপনের ফলাফলগুলি পরিমাপ করুন এবং প্রয়োজনে আপনার কৌশল সামঞ্জস্য করুন।
আপনার লক্ষ্য দর্শককে সঠিকভাবে টার্গেট করার মাধ্যমে, আপনি আপনার বিজ্ঞাপনগুলি এমন লোকেদের কাছে প্রদর্শন করতে পারেন যারা আপনার পণ্য বা পরিষেবাগুলির জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক বার্তা এবং নকশা ব্যবহার করে, আপনি আপনার বিজ্ঞাপনগুলিতে ব্যবহারকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। এবং আপনার বিজ্ঞাপনের ফলাফলগুলি পরিমাপ করে, আপনি দেখতে পারেন যে আপনার কৌশলটি কতটা কার্যকর এবং প্রয়োজনে আপনার কৌশল সামঞ্জস্য করতে পারেন।
আমাদের শেষ কথা
ফেইসবুক মার্কেটিং একটি শক্তিশালী অনলাইন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি যা যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তার লক্ষ্যমূলক দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে, ব্যবসা বৃদ্ধি করতে এবং বিক্রয় বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ফেইসবুক মার্কেটিং শুরু করতে, আপনাকে প্রথমে প্রফেশনাল একটি ফেইসবুক পেজ তৈরি করতে হবে এবং আপনার লক্ষ্য দর্শককে সঠিকভাবে টার্গেট করার জন্য একটি কৌশল তৈরি করতে হবে। এর পাশাপাশি ফেইসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে বিভিন্ন রিসোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা ফেইসবুক মার্কেটিং কি, ব্যবসা ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা কি, কিভাবে ফেইসবুক মার্কেটিং করবেন ইত্যাদি বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পাঠকের কাজে আসবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না। আজকের মত এখানেই, ফিরবো অন্য কোনো আর্টিকেল নিয়ে। ততক্ষন পর্যন্ত ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।