ওজন কমানোর উপায়
শরীরের ওজন বেশি হোক বা কম দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতির কারন। অতিরিক্ত কম ওজনে যেমন শরীর দূর্বল লাগে তেমনি অতিরিক্ত বেশি ওজনেও হাটাচলায় অসুবিধাসহ বিভিন্ন রকম সাস্থ্যঝুঁকির সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ওজনকে ওভারওয়েট বলা হয়।
একজন ওভারওয়েট ব্যক্তির শরীরে মাসল ও ফ্যাটের পরিমান তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। কোনো ব্যক্তির “বিএমআই (BMI)” ২৫ এর বেশি হলে তাকে ওভারওয়েট হিসেবে ধরা হয়। এই বিএমআই হলো শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজনের অনুপাত। “বিএমআই” শব্দের ইংরেজি ফর্ম হলো “BMI” যার পূর্নরুপ “Body mass index”.
আজকের আর্টিকেলে আমরা ওজন বৃদ্ধির কারন, এবং ওজন কমানোর কিছু কার্যকরী উপায় সম্পর্কে জানবো। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই আমাদের আজকের আর্টিকেলটি।
আজকে যা জানব
- ওজন বৃদ্ধির কারন
- ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা
- ওজন কমানোর ব্যায়াম
- বিএমআই চার্ট
- কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর
- আমাদের শেষ কথা
ওজন বৃদ্ধির কারন
বিভিন্ন কারনে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। নিচে ওজন বৃদ্ধির কারনগুলো বিশ্লেষন করা হলো।
অতিরিক্ত খাওয়া:
আপনি যদি পরিমানের তুলনায় বেশি পরিমান খাদ্য গ্রহন করেন তবে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক। আপনি যদি আপনার শরীরের চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমানে ক্যালরি গ্রহন করেন ও সেগুলো ব্যয় না করেন তবে আপনার ফ্যাটের পরিমান বৃদ্ধি পাবে।উদাহরণস্বরুপ ধরুন, বিএমআই অনুযায়ী আপনার শরীরের চাহিদা ১০০০ ক্যালোরি, কিন্তু আপনি প্রতিদিন গ্রহন করছেন ১২০০ ক্যালোরি। এক্ষেত্রে আপনার অতিরিক্ত ২০০ ক্যালোরি শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমা হবে, যার কারনে আপনি ধীরে ধীরে ওভারওয়েট হবেন। তাই ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত খাওয়া বাদ দিতে হবে।
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস:
অনিয়মিত খাদ্যাভাস ও কিন্ত অতিরিক্ত ওজনের পিছনে বড় একটি কারণ হতে পারে। সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, চিনি জাতীয় খাবার গ্রহন, বিভিন্ন জাঙ্কফুড যেমন; পিজ্জা, বার্গার, চকলেট, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদির অপরিমিত গ্রহণের ফলে শরীরে প্রচুর পরিমানে মেদ বৃদ্ধি পায়।
শারীরিক পরিশ্রমের অভাব:
শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ওজন বৃদ্ধির পক্ষে একটি অন্যতম কারণ। শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের মেদ ভুড়ি বার্ণ হয় ফলে শরীর অতিরিক্ত মেদ ধরে রাখতে পারেনা। আপনি যদি শারীরিক পরিশ্রম না করেন তাহলে আপনার শরীরে জমা থাকা অতিরিক্ত ফ্যাট খুব কম বার্ণ হবে এটাই স্বাভাবিক। কেননা শরীরের মেদের একটা বড় অংশ শারীরিক ব্যায়ামের ফলেই ক্ষয় হয়ে থাকে।
বংশগত কারন:
কিছু মানুষ বংশগত বা জীনগত কারনেও ওভারওয়েট হয়ে থাকে। কোনো ব্যক্তির পিতা-মাতা, দাদা-দাদী বা রক্তের আত্মীয়সম্পর্কের কারো স্থুলতা থাকলে সেটি জীনগতভাবে সেই ব্যক্তির পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটিকেই স্থুলতার জীনগত বা বংশগত কারণ হিসেবে বোঝাও হয়েছে।
আরো পড়ুন :
- শীতে ত্বক ও চুলের পরিচর্যা
- মেয়ে বাবুদের জন্য ইসলামিক নাম অর্থসহ
- ছেলে বাবুদের জন্য ইসলামিক নাম অর্থসহ
মেডিসিনের প্রভাব:
কিছু মেডিসিন দীর্ঘ সময় ধরে গ্রহনের ফলেও শরীরের ওজন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। যে যে ওষুধ ওজন বৃদ্ধি করতে পারে এরকম কিছু ওষুধের নাম নিচে দেয়া হলো।
- স্টেরয়েড হরমোন: বিভিন্ন স্টেরয়েড হরমোনের ঔষধ যেমন; অ্যানাবলিক স্টেরয়েড, টেস্টোস্টেরন এবং এনানড্রোস্টেনডিওন ইত্যাদির প্রভাবে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
- হরমোন থেরাপি: কিছু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হরমোন থেরাপির ফলেও ওজন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
- ডায়াবেটিক ওষুধ: ডায়াবেটিস রোগের কিছু ওষুধ ও ইনসুলিন ইনজেকশন রয়েছে যেগুলোর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ফলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা
ওজন কমানোর জন্য একজন ডায়েটিশিয়ান শরণাপন্ন হলে ভালো হয়। তিনি আপনাকে আওনার শরীরের অবস্থা বুঝে একটি ভালো ডায়েটপ্ল্যান দিতে পারেন। নিচে ওজন কমানোর জন্য ১৪০০ ক্যালোরির একটি সম্ভাব্য খাদ্যতালিকা বা ডায়েট চার্ট শেয়ার করা হলো।
ব্রেকফাস্ট | লাঞ্চ | নাস্তা | ডিনার |
ওটস (এক কাপ) | সালাদ (পরিমানমত) | মৌসুমি ফল(যেকোনো ১টি) | সবজি সুপ (১ কাপ) |
মৌসুমী ফল (যেকোনো ১টি) | মাছ বা মাংস(১ পিস) | দই (১ কাপ) | সবজি তরকারি (ছোট ১ বাটি) |
বাদাম (৪-৫টি) | ডাল (১কাপ মাঝারি ঘনত্বের) | বাদাম (৪-৫টি) | রুটি (১টি পাতলা) |
এটি ১৪০০ ক্যালোরির একটি ডায়েট চার্ট। তবে আপনার ১৪০০ ক্যালোরির ডায়েটপ্ল্যান প্রয়োজন নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী এই খাবারগুলোর পরিমান কিছুটা বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিয়ে আপনার ডায়েটপ্ল্যান সাজাতে পারেন।
ওজন কমানোর ব্যায়াম
নিচে ওজন কমানোর কিছু সহজ ব্যায়াম দেয়া হলো।
ভার উত্তোলন: ভার উত্তোলন ওজন কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী একটি ব্যায়াম। এটি অতিরিক্ত ক্যালোরি পুড়িয়ে ফেলে সেইসাথে পেশীকে শক্তিশালী ও শরীরকে ঝরঝরে করে তোলে।
দ্রুত হাটা: দ্রুত হাটা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। নিয়মিত দ্রুত গতিতে হাটা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ক্যালোরি বার্ণ করে ওজনকেও নিয়ন্ত্রনে রাখে।
সাঁতার: ওজন কমাতে সাঁতার খুবই ভালো একটি ব্যায়াম। এটি পেশী গঠন করা ও স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি ক্যালোরিও বার্ণ করে থাকে। একজন ৭০ কেজি ওজনের ব্যক্তি প্রতি ঘন্টা সাঁতার কাটলে প্রায় ৭০০ ক্যালোরি পোড়াতে পারে।
দৌড়: দৌড়কে ওজন কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ব্যায়াম বলা যায়। এটি একটি হাই ইন্টেন্সিটি ওয়ার্কআউট যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ভালো একটি ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
বাইসাইকেল রাইডিং: সাইকেল চালানোও হতে পারে ওজন কমানোর একটি মজাদার ব্যায়াম। এটি ওজন কমানোর পাশাপাশি হাত ও পায়ের পেশীকে মজবুত করে তোলে।
বিএমআই চার্ট
নিচে সুস্থ অবস্থার একজন নারী ও পুরুষের ওজন কতটুকু হওয়া উচিৎ তা জানার জন্য বিএমআই চার্ট দেয়া হলো।
উচ্চতা | পুরুষ (কেজি) | নারী (কেজি) |
৪ ফুট ৭ ইঞ্চি | ৩৯-৪৯ | ৩৬-৪৬ |
৪ ফুট ৮ ইঞ্চি | ৪১-৫০ | ৩৮-৪৮ |
৪ ফুট ৯ ইঞ্চি | ৪২-৫২ | ৩৯-৫০ |
৪ ফুট ১০ ইঞ্চি | ৪৪-৫৪ | ৪১-৫২ |
৪ ফুট ১১ ইঞ্চি | ৪৫-৫৬ | ৪২-৫৩ |
৫ ফুট | ৪৭-৫৮ | ৪৩-৫৫ |
৫ ফুট ১ ইঞ্চি | ৪৮-৬০ | ৪৫-৫৭ |
৫ ফুট ২ ইঞ্চি | ৫০-৬২ | ৪৬-৫৯ |
৫ ফুট ৩ ইঞ্চি | ৫১-৬৪ | ৪৮-৬১ |
৫ ফুট ৪ ইঞ্চি | ৫৩-৬৬ | ৪৯-৬৩ |
৫ ফুট ৫ ইঞ্চি | ৫৫-৬৮ | ৫১-৬৫ |
৫ ফুট ৬ ইঞ্চি | ৫৬-৭০ | ৫৩-৬৭ |
৫ ফুট ৭ ইঞ্চি | ৫৮-৭২ | ৫৪-৬৯ |
৫ ফুট ৮ ইঞ্চি | ৬০-৭৪ | ৫৬-৭১ |
৫ ফুট ৯ ইঞ্চি | ৬২-৭৬ | ৫৭-৭৩ |
৫ ফুট ১০ ইঞ্চি | ৬৪-৭৯ | ৫৯-৭৫ |
৫ ফুট ১১ ইঞ্চি | ৬৫-৮১ | ৬১-৭৭ |
৬ ফুট | ৬৭-৮৩ | ৬৩-৮০ |
৬ ফুট ১ ইঞ্চি | ৬৯-৮৬ | ৬৫-৮২ |
এছাড়াও আপনি আপনার ওজন জানার জন্য
“BMI CALCULATOR” ব্যবহার করতে পারেন।
বিএমআই নির্নয়ের একটি সহজ সূত্র ও রয়েছে।
BMI = ওজন (কেজি) ÷ উচ্চতা (মিটার)২
কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর
এ অংশে কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর সংযোজন করা হলো।
প্রশ্ন ১: কিভাবে দ্রুত ওজন কমাতে পারি?
উত্তর: আমার মতে ওজন কমানোর শর্টকাট উপায় ব্যবহার করা উচিৎ নয়। অনেকেই বিভিন্ন ক্রাশ ডায়েট ফলো করে অতি দ্রুত কিছুটা ওজন কমিয়ে ফেলেন কিন্ত পরবর্তিতে ডায়েট ছেড়ে দেয়ার পর দেখা যায় শরীরে পূর্বের চাইতে আরো বেশি মেদ তৈরি হয়ে যায়, কেননা অনেক সময় এই ধরনের ডায়েট ইমিউনিটি সিস্টেমে গন্ডগোল তৈরি করাসহ নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে থাকে। মনে রাখবেন যে জিনিস যত দ্রুত তৈরি হয় তা ততো দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়।
আপনার ওজন যদি খুব বেশি হয় এবং শরীরে অন্য কোনো রোগ থাকে তবে ওজন কমানোর জন্য আপনার প্রথমেই একজন ভালো ডায়েটিশিয়ান এর শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। আর যদি আপনার মনে হয় আপনি নিজে নিজে ডায়েট করবেন তাহলে আপনাকে আগে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি কোনো রোগে আক্রান্ত নন। এরপরে আপনি চাইলে বিএমআই অনুযায়ী আপনার ক্যালোরির চাহিদা আমাদের উপরের ডায়েটটি ফলো করতে পারেন। এর পাশাপাশি আমাদের উল্লেখিত সহজ ব্যায়ামগুলোও চালিয়ে যান। ডায়েট এর সাথে এক্সারসাইজ অতি দ্রুত নিরাপদভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ২: কি কি বিষয় ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে?
উত্তর : অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও মানসিক উদ্বেগ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। আপনার যদি ঘুমের সাইকেল ঠিক না থাকে এবং আপনি যথেষ্ট পরিমানে মানসিক উদ্বেগ নিয়ে থাকেন তাহলে আপনি ডায়েট ও এক্সারসাইজে ভালো ফলাফল নাও পেতে পারেন। তাই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা এবং দূশ্চিন্তামূক্ত থাকা উচিৎ।
আমাদের শেষ কথা
অতিরিক্ত ওজন যেমন স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করে তেমনি এটি একজন ব্যক্তির জন্য হতে পারে হতাশার কারন। আজকের আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি ওজন বৃদ্ধির কারন ও ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করতে। আর্টিকেলটি পাঠকের উপকারে আসবে বলে আশা রাখছি।