Health Tips

সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ১০টি গুরুত্তপূর্ন টিপস| 

সুস্থতা সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে বড় নিয়ামত। একজন অসুস্থ ব্যক্তির অঢেল ধন-সম্পদ সত্যিকার অর্থে তার তেমন কোনো কাজেই আসেনা। শরীর সুস্থ থাকলে একজন ব্যক্তি তার সকল দৈনন্দিন কাজ সুন্দরভাবে মনোযোগ সহকারে সম্পন্ন করতে পারে। সুস্থতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি প্রচলিত জনপ্রিয় প্রবাদ বাক্য রয়েছে যে, ’’স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’’। তবে সুস্থতা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত নিয়ামত হলেও এমন কিছু ভালো অভ্যাস রয়েছে যেগুলো মেনে জীবনযাপন করার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন রোগ বালাইকে অনেকটাই এড়িয়ে চলতে পারি।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের শিরোনাম এবং আমার এতক্ষন বলা কথাগুলো শুনে হয়তো ইতিমধ্যেই আপনারা বুঝে গেছেন যে, আমরা আজকে কি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন! আমরা আজকে এমন দশটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করবো যা সুস্থ জীবনযাপনের জন্য খুবই গুরুত্তপূর্ণ। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আলোচনা।

আলোচ্য বিষয়ঃ

  • সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ১০টি টিপস
  • কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
  • আমাদের শেষ কথা

সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ১০টি টিপস

নিচে আমাদের আজকের আর্টিকেলের মুল টপিক সুস্থ থাকার ১০টি প্রয়োজনীয় টিপস নিয়ে আলোচনা করা হলো।

টিপস ১. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা: নিয়মিত  শারীরিক ব্যায়াম শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুস্থ,  স্বাভাবিক ও সচল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, শারীরিক ব্যায়াম মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতেও সাহায্য করে থাকে। 

Untitled design
সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ১০টি গুরুত্তপূর্ন টিপস|  3

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এর মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ, সংবহন তন্ত্রের জটিলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থুলতা, অস্টিওপোরেসিস ও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের মত সাস্থ্যঝুঁকির হাত থেকে অনেকটাই পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। তাই সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।

টিপস ২. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ: সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাবার গ্রহন করা খুবই গুরুত্তপূর্ণ। সুষম খাবার শরীরের সকল পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। 

আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকাটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন এতে প্রায় সব ধরনের পুষ্টিচাহিদা পূরন হয়। বিভিন্ন ধরনের রঙিন ফল, শাকসবজি, whole grains, lean protein, এবং healthy fats ইত্যাদি; জাতীয় খাবার দিয়ে শরীরের সব ধরনের পুষ্টিচাহিদা পূরন করতে হবে।

টিপস ৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহন: শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম খুবই জরুরি। বিশ্রাম ও ঘুম শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে মেরামত করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে। 

পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে শরীর ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্রাম না নিলে শরীর তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা অবশ্যই ঘুমানো উচিত।

টিপস ৪. পর্যাপ্ত পানি পান করা: পানি আমাদের শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। একজন প্রাপ্তবয়স্কের প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। 

পানি আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রনে রাখে, কৌষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং শরীরের ওজনকেও নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই সুস্থ থাকার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

টিপস ৫. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা: ধূমপান ও মদ্যপানসহ যেকোনো ধরনের এলকোহল জাতীয় পানীয় বা নেশাদ্রব্য স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এইসমস্ত নেশাদ্রব্য ক্যান্সার, হৃদরোগ, এবং অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে চাইলে ধূমপান ও মদ্যপানসহ যেকোনো নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন।

টিপস ৬. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা: মানসিক স্ট্রেস বা চাপ শারীরিক এবং মানসিক উভয় সাস্থ্যের জন্যই অত্যন্ত ক্ষতিকর। মানসিক চাপ  শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে থাকে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যোগব্যায়াম, ধ্যান, এবং অন্যান্য রিলাক্সেশন ব্যায়ামের কৌশলগুলি কাজে লাগাতে পারেন ।

টিপস ৭. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা: সুস্থ থাকতে শরীরের নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে শরীরের যেকোনো অসুস্থতা দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক জটিল রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়।

টিপস ৮. নিরাপদ যৌনতা পালন করা: বিভিন্ন যৌনবাহিত রোগ থেকে বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ যৌনতা পালন করতে হবে। নিরাপদ যৌনতা পালন করে বিভিন্ন ক্ষতিকর যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

টিপস ৯. সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষা নেওয়া: সূর্যের আলো আমাদের ভিটামিন ডি দেয় তবে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষা নেওয়ার জন্য “SPF15+” সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, ছাতা বা টুপি ব্যবহার করা, এবং সূর্যের আলোতে বের হওয়ার সময় হালকা রঙের পোশাক পরা উচিত। 

সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের আলো অত্যন্ত তীব্র থাকে তাই এসময় বাইরে অবস্থান যথাসম্ভব কম করতে হবে। এছাড়া ডায়েটে ফল এবং সবজি রাখতে হবে। ফল এবং সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা সূর্যের আলো থেকে ত্বককে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করে।

টিপস ১০. সৃজনশীলতা ও ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা: সৃজনশীলতা ও ইতিবাচক মনোভাব মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। সৃজনশীল কাজ যেমনঃ গান, শিল্প, নাটক, অঙ্কন, লেখালেখি, বাগান করাসহ বিভিন্ন সখের কাজ আমাদের মানসিক চাপ,উদ্বেগ,বিষন্নতা ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। 

এছাড়া ইতিবাচক মনোভাব আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং মানসিক অসুস্থতার ঝূঁকি কমায়। তাই সুস্থ থাকতে ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হতে হবে এবং সৃজনশীল কাজের জন্য দিনের মধ্যে কিছু সময় বরাদ্দ রাখতে হবে।

কিছু গুরুত্তপূর্ন প্রশ্নোত্তর

এ অংশে আমাদের আজকের আর্টিকেলের সাথে সম্পর্কিত কিছু গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্নোত্তর দেওয়া হল।

প্রশ্ন ১। সুস্থ থাকার জন্য আর কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?

উত্তরঃ সুস্থ থাকার জন্য আপনি নিম্নলিখিত টিপসগুলো অনুসরন করতে পারেন।

  • বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার , অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যান এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠুন।
  • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ,যোগব্যায়াম ,মেডিটেশন ইত্যাদির অভ্যাস তৈরি করুন।
  • মদ্যপান বিশেষ করে এলকোহল জাতীয় নেশাদ্রব্য পরিহার করুন।
  • পরিমিত পরিমানে খাবার খান।

এই বিষয়গুলো পালন করে আপনি সুস্থ জীবনযাপন করতে সক্ষম হবেন।

আরো পড়ুন:

প্রশ্ন ২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় কী?

উত্তরঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কিছু উপায় নিম্নে দেওয়া হলঃ

  • প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ,বি, সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খান ।
  • সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃসামুদ্রিক খাবার,মাছ,মাংস,ডিম ইত্যাদি খান।
  • সুর্যঊদয়ের সময় কিছুক্ষন সূর্যের আলোতে অবস্থান করা।
  • পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নেওয়া ও ঘুমানো।

প্রশ্ন ৩। ধুমপান ও মদ্যপানের ক্ষতিকারক দিকগুলো কী কী?

  • ধুমপান এবং মদ্যপানের ফলে ফুসফুস, গলা, মুখ, স্তন ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ক্যান্সার হতে পারে।
  • ধুমপান ও মদ্যপানের ফলে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয় যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
  • ধুমপান শুধু সেবনকারীর নয় বরং তার আশেপাশের মানুষেরও ক্ষতি করে।
  • ধুমপানের ফলে পরিবেশেরও ক্ষতি হয় এবং ধুমপানের ফলে পরিবেশে নিকোটিন,কার্বন মনোঅক্সাইড,নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস নির্গত হয় যা জলবায়ু পরিবর্তনে ভুমিকা রাখে।

আমাদের শেষ কথা

সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন প্রতিটি মানুষই প্রত্যাশ্যা করে। কিন্তু সুস্থ থাকতে গেলে অবশ্যই নিজেকে সুস্থ রাখার উপায়গুলো জানতে হবে এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে। তাই আপনাদেরকে সুস্থ থাকার উপায়গুলো জানানোই আমাদের এ আর্টিকেলের উদ্দেশ্য। এই আর্টিকেলটি আপনাকে সুস্থ থাকার উপায়গুলো সম্পর্কে জানতে এবং পালন করতে সাহায্য করবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

BD Govt

B Govt. Com এর পক্ষ থেকে স্বাগতম। BD Govt সাইটে সরকারি সকল চাকরির খবর, শিক্ষামূলক তথ্য, স্বাস্থ্য টিপস, টেকনোলজি এবং বাংলাদেশের সরকারি তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button